জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে বনগাঁ কংগ্রেস
(পঞ্চম পর্ব)
সুনীলকুমার রায়
ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী তাঁর পেশাগত কারণে যশোরে চলে গেলে বন্দেবিলের বিজয় রায়, বনগাঁর প্রফুল্ল ঘোষ তৎকালীন এখানকার কংগ্রেসের সব বিভাজনগুলিকে এক করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তখন বনগাঁ মহকুমা কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন অজিত গাঙ্গুলী এবং যশোর কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন কৃষ্ণ বিনোদ রায়। ছয়ঘড়িয়া পল্লী কংগ্রেস দল, এম এস ক্লাব ভিত্তিক কংগ্রেস দল, স্টেশন এলাকায় বিষ্ণুপদ মন্ডলের পৃথক কংগ্রেস দল, পটলবাবুর বাড়িতে অভয় আশ্রম প্রভাবিত কংগ্রেস দল, পূর্ণ সরকারের আখড়া সহ সবাইকে একত্রিত করে শক্তিশালী কংগ্রেস দল গঠন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে কিছুটা সাফল্য পেয়েছিলেন।
এই সময় এদের এক বৃহৎ সাফল্য আসে যে, এখানকার শক্তিশালী মুসলিম লীগ সংগঠনকে কিছুটা দুর্বল করতে। এই মুসলিম লীগের কয়েকজন জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে কংগ্রেসে যোগ দেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মেদিয়ার আব্দুর রহমান, ঘাট পাতিলার আলীকদর মন্ডল, গাইঘাটার ফকির আহমেদ, জব্বার আলী মিঁয়া, সাহেব আলী বিশ্বাস, রনকালী বিশ্বাস, সিরাজুল ইসলাম সহ অনেকে। রণকালি বিশ্বাস জেলা ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্য ছিলেন। জাহান আলী সাহেব ইউনিয়ন বোর্ডের সভাপতি আর সহ সভাপতি ছিলেন পটলবাবু। পরে বিষ্ণুপদ মন্ডল সভাপতি হন।
এই সময় পটলবাবু খদ্দরের দোকান করে খদ্দর বিক্রি করতেন। পটলবাবুর নেতৃত্বে বনগাঁর সর্বস্তরের কংগ্রেস কর্মীরা খাদি আন্দোলন শুরু করে। মদের দোকানে পিকেটিং করেন। মদের দোকানের মালিক ছিলেন লীগ সদস্য হানিফ মিঁয়া।
এখানকার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহিলারা স্বদেশী আন্দোলনে নিজেরা সামিল হন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রেবা দত্ত, রুনু দত্ত, শেফালিকা ঘোষ, পদ্ম রায়, অন্নপূর্ণা গোস্বামী। বনগাঁ কুমুদিনী স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে বিদেশি দ্রব্য বর্জন করার এক সাহসী আন্দোলন করেন।
বনগাঁয় যখন কংগ্রেস সংগঠনটি শক্তিশালী হয়, তখন যশোরের জেলা শাসক ছিলেন এলিসন সাহেব। তিনি ছিলেন খুব অত্যাচারী শাসক। কংগ্রেসিদের উপর অকথ্য অত্যাচার ও নির্মম প্রহার করে জেলবন্দি করেছিলেন। কংগ্রেসের দুই আইনজীবী সত্যচরণ বসু ও সুরেন্দ্রনাথ দত্তরা তীব্রভাবে আইনি লড়াই লড়েন। সেই লড়াইয়ের তীব্রতায় ছাড়া পান সুশীল ঘোষ, ননীগোপাল চ্যাটার্জী, গোপাল সাধু, বিজয় সরকার, অজিত গাঙ্গুলী, প্রকাশ বসু, ননী সরকার, রাসবিহারী ঘোষ সহ অনেকে।
তখন দেশব্যাপী গান্ধীজীর নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ আন্দোলন চলছিল। বনগাঁ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন পটলবাবু। সহ-সভাপতি ছিলেন দেবকী দুলাল দত্ত। মোট সদস্য ছিলেন ১৮৭ জন। তাঁরাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এই আন্দোলনের তীব্রতায় শঙ্কিত হয়ে ইংরেজ সরকার কংগ্রেসকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে। চলে ১৯৩৪ সাল অবধি।
১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট ইংরেজদের বিরুদ্ধে 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের ডাক দেন গান্ধীজী। সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে কারাবরণ করেন প্রফুল্ল ঘোষ, পটল বাবু, অজিত গাঙ্গুলী, প্রতুল রায়, রঞ্জন চক্রবর্তী, গোপাল সাধু, আলীকদর সাহেব সহ অনেকেই। যশোরের ডাঃ জীবন রতন ধরও পরবর্তীতে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।..... (চলবে)
---------------------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন