Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

ব্রেকফাস্টে পান্তাভাত, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বলছে গবেষণা

 

Immunity will increase in Pantabhat

সমকালীন প্রতিবেদন : ব্রেকফাস্টে কাঁচালঙ্কা, পেঁয়াজ সহযোগে পান্তাভাত। শুনেই নাক সিঁটকোচ্ছেন নিশ্চয়। অনেকে হয়তো ভাবছেন, এ হল চাষাদের খাবার। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ব্রেকফাস্টে বার্গার, কর্নফ্লেক্স, স্যান্ডউইচ, ড্রাই ফ্রুটেই অভ্যস্ত। যদিও আজও বহু মানুষ আছেন, যাঁরা পান্তাভাত দিয়েই সকালে পেট ভরান। তার পর কাঁধে গামছা নিয়ে, কোদাল হাতে মাটি কোপাতে যান। কিংবা চাষের জমিতে লাঙল চষতে। গন্ধরাজ লেবু, কাঁচালঙ্কা, তেল, নুন, পেঁয়াজ আর সঙ্গে যদি থাকে কোনও ভাজা কিংবা আচার, তা হলে তো কথাই নেই। অনেকে আবার শুকনো লঙ্কা দিয়ে মেখে ডালের বড়া দিয়ে পান্তাভাত খেতে ভালবাসেন। বাংলাদেশে শুঁটকি মাছ দিয়ে পান্তাভাত রীতিমতো রাজকীয় ব্যাপার। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গই শুধু নয়, অসম, বিহার, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরলেও পান্তাভাত খাওয়ার চল রয়েছে। এক এক জায়গায় পান্তাভাতকে এক এক নামে ডাকা হয়। তাইল্যান্ড, মায়ানমার, চিন, ইন্দোনেশিয়ার মানুষও ফার্মেন্টেড রাইস খেয়ে থাকেন। তবে সেটি তৈরি করার পদ্ধতি আলাদা। এ রাজ্যে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূমের মানুষ পান্তাভাতের সঙ্গে খেতে ভালবাসেন মাছের টক, পোস্তবাটা, বড়া। সঙ্গে যদি থাকে কলাইগুড়ো, কলাইবাটা, শাকভাজা– তা হলে তা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। 

ভাবছেন তো, হাজারো একটা জিভে জল আনা খাবার ছেড়ে হঠাৎ করে পান্তাভাত নিয়ে এত কথা কেন। তা হলে শুনুন, গবেষণা বলছে, শরীরে ইমিউনিটি বাড়াতে পান্তাভাতের জুড়ি মেলা ভার। টানা সাতদিন পান্তাভাত খেলেই হাতেনাতে ফল মিলতে শুরু করবে। মূলত দিনের শেষে যে ভাত বেচে যায়, গ্রামবাংলায় তাতেই জল ঢেলে রাখেন বাড়ির কর্ত্রী। পরদিন সকালে অনেকটা ফুলে ওঠে সেই ভাত। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মহিলা কিশোয়ার চৌধুরী পান্তা ভাত রেঁধে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক একটি প্রতিযোগিতায় এ ধরনের একটি আটপৌরে খাবারও যে পরিবেশন করা যায়, তা হয়তো ভাবতেই পারেননি অন্য প্রতিযোগী কিংবা বিচারকরা। পান্তাভাতের গুণাগুন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা গবেষণা চলেছে। পান্তাভাতের আরেক নাম কাঞ্জি। বৈষ্ণবরা জ্যৈষ্ঠ মাসে রাধাকৃষ্ণকে পান্তাভাত দিয়ে ভোগ দেন। মা দুর্গাকেও দশমীতে পান্তা খেতে দেওয়া হয়।

অসম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পান্তাভাত নিয়ে একটি গবেষণা হয়েছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষি জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুমিতা বড়ুয়া। ওই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, পান্তাভাতে কী আছে এবং সেসব উপাদান শরীরের জন্য কতটা উপকারি। গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এশিয়ান জার্নাল অফ কেমিস্ট্রিতে। তবে সম্পূর্ণ গবেষণা এখনও শেষ হয়নি। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পান্তাভাত কতটা ভাল না খারাপ, তা নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। বিজ্ঞানীদের দাবি, ভাত জলে ভিজিয়ে রাখলে তার ভিতরে থাকা কার্বোহাইড্রেট ভেঙে যায়। এছাড়াও ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যেসব অ্যান্টি নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকে, সেগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বিজ্ঞানীদের দাবি, ফাইটেট পুষ্টিকর পদার্থগুলিকে বেঁধে রাখে। ফলে ভাত খেলেও শরীর সেসব পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু ভাত ভিজিয়ে রাখলে অর্থাৎ পান্তা করে খেলে তার ভিতরে থাকা ফাইটেট দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তা গ্রহণ করতে পারে শরীর। পান্তাভাতে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ যেমন, আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস, ভিটামিন বি প্রভৃতি।

গবেষকরা বলছেন, একরাত ভিজিয়ে রাখলে ভাতের মধ্যে আয়রনের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। একশো গ্রাম গরম ভাতে যেখানে মাত্র ৩.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, সমপরিমাণ পান্তাভাতে থাকে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম। আর আয়রন যে শরীরে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, সেটা কার না জানা। শুধু তাই নয়, পান্তাভাতে বেড়ে যায় ক্যালশিয়াম, পটাশিয়ামের পরিমাণও। দেখা গিয়েছে, ১০০ গ্রাম গরম ভাতে ক্যালশিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম। সমপরিমাণ পান্তাভাতে তা বেড়ে হয় ৮৫০ মিলিগ্রাম। এছাড়াও পান্তাভাত থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১২। পান্তাভাত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ হয়। বজায় থাকে তাপের ভারসাম্য। পান্তাভাত সহজেই হজম হয়ে যায়। গরম ভাতের চেয়ে পান্তাভাতে সোডিয়াম কম থাকায় স্বাভাবিক থাকে রক্তচাপ। পান্তাভাত যেহেতু ফারমেন্টেড খাবার, তাই এটি খেলে হাল্কা থাকে শরীর। মানুষের শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠে পান্তাভাতের মধ্যে। পেটের সমস্যা দূর হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে না। 

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পান্তাভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস থাকে, যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়। কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া পান্তাভাতে রয়েছে আইসোরহ্যামনেটিন সেভেন গ্লুকোসাইড ফ্লাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস, যা ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। দইয়ের মধ্যে যে ল্যাকটিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, তা পান্তাভাতেও থাকে। তবে সারারাত জলে ভেজানো থাকার ফলে পান্তাভাতের মধ্যে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয়। ফলে এই ভাত খেলে গা ম্যাজম্যাজ করতে পারে। কিংবা আসতে পারে ঝিমুনিভাব। অফিসে কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লে জুটতে পারে বসের বকুনি। এটুকুই যা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন