সমকালীন প্রতিবেদন : ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িকে কেন্দ্র করে মতুয়া ভক্তদের মারধরের অভিযোগে বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর। এই ঘটনায় শান্তনু ঠাকুর-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম বরুণ বিশ্বাস। সে বাগদা থানার পুরাতন হেলেঞ্চা এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার তাকে গাইঘাটা থানার পুলিশ বনগাঁ মহকুমা আদালতে পেশ করে।
এদিনের হামলার ঘটনাকে ঘিরে গাইঘাটা থানায় সাংসদ শান্তনু ঠাকুর, বিজেপির জেলা সভাপতি বিকাশ ঘোষ সহ মোট ১৪ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগকারীর দাবি, অভিযুক্ত সকলেই বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের অনুগামী। যদিও এখনও পর্যন্ত মাত্র একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছেন মমতা ঠাকুর। তাঁর অভিযোগ, ঠাকুরবাড়ি চত্বরে মতুয়া ভক্তদের উপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। অভিযোগ, মমতা ঠাকুরের অনুগামী মতুয়া ভক্তরা শান্তনু ঠাকুরের এক বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে ঠাকুরনগরে তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে যান। সেই সময় শান্তনু ঠাকুরের অনুগামীরা মিছিলে চড়াও হয়। ব্যানার কেড়ে নেওয়া হয়, ব্যাপক মারধরের ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ। এই হামলায় একাধিক মতুয়া ভক্ত আহত হন। তাঁদের মধ্যে নান্টু হালদার নামে এক ‘গোসাই’ বর্তমানে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মমতা ঠাকুর ছাড়াও তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান সিপিআইএমের প্রাক্তন সাংসদ অলকেশ দাস-সহ একটি প্রতিনিধি দল।
মমতা ঠাকুর দাবি করেছেন, ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই এফআইআর করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “মতুয়াদের উপর হামলা হয়েছে, গালাগালি, ছিনতাই এমনকি মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগও রয়েছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৪ জনকেই আমরা গ্রেফতার দেখতে চাই।” তিনি আরও বলেন, ঠাকুরবাড়িতে অতীতেও অশান্তি হয়েছে, কিন্তু এ ধরনের সহিংসতা আগে কখনও দেখা যায়নি। তাঁর অভিযোগ, শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বেই এই ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা সরাসরি মারধরের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তা শনাক্ত করে প্রয়োজনে আরও গ্রেফতার করা হতে পারে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে ঠাকুরবাড়ি এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শান্তনু ঠাকুরের সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের (শান্তনুপন্থী) সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দ্র নাথ গাইন। তাঁর দাবি, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি ঘটনার সময় ঠাকুরবাড়িতেই উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর আরও বক্তব্য, সংঘাধিপতির নামে কটুক্তি করায় ভক্তরাই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে বাগদার এক সভায় সিএএ ও এসআইআর প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের মন্তব্য ঘিরেই বিতর্কের সূচনা। তিনি বলেছিলেন, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলমানদের নাম বাদ দিতে গিয়ে যদি এক লক্ষ মতুয়াকে ভোটাধিকার থেকে বিরত থাকতে হয়, তাতেও আপত্তি নেই। এই মন্তব্যে মতুয়া সমাজের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সেই মন্তব্যের প্রতিবাদেই বুধবার ঠাকুরবাড়ির সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
যদিও এব্যাপারে শান্তনু ঠাকুর জানান, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঠাকুরনগরে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে। একদিকে গ্রেফতার ও কঠোর পদক্ষেপের দাবিতে অনড় তৃণমূল, অন্যদিকে অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা ব্যাখ্যায় অনড় বিজেপি শিবির। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, এখন সেদিকেই নজর প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন