Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫

২০২৬-এ ফের ভারত-পাক সংঘাতের আশঙ্কা, ‘অপারেশন সিঁদুর ২.০’-এর সম্ভাবনার ইঙ্গিত মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের

 

India-Pakistan-conflict

সমকালীন প্রতিবেদন : ২০২৬ সালেও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না মার্কিন বিদেশনীতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস’ (সিএফআর)। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলাকে কেন্দ্র করে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে ফের উত্তেজনা ছড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। ‘কনফ্লিক্টস টু ওয়াচ ইন ২০২৬’ শীর্ষক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘অস্থির’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সিএফআর-এর মূল্যায়ন অনুযায়ী, কাশ্মীরে নতুন করে জঙ্গি হামলার ঘটনা ভারত-পাক সীমান্তে ফের সংঘর্ষের জন্ম দিতে পারে। এই সম্ভাবনাকে তারা ‘মাঝারি মাত্রার ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি রিপোর্টে বলা হয়েছে, এমন সংঘাত মার্কিন স্বার্থের উপরও ‘মাঝারি প্রভাব’ ফেলতে পারে। মার্কিন বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েই এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএফআর।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরস্ত্র নাগরিকের মৃত্যু হয়। ভারতের কাছে প্রাপ্ত অকাট্য তথ্য অনুযায়ী, লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন টিআরএফ ওই হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ঘটনার প্রায় ১৫ দিনের মাথায় পাল্টা জবাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। ৬ মে গভীর রাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মোট ন’টি জঙ্গিঘাঁটিতে নিখুঁত হামলা চালানো হয়।

ভারতের এই অভিযানের পর সীমান্তে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির জনবহুল এলাকা ও সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ভারত সেই হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা প্রত্যাঘাত করে। ভারতীয় সেনার অভিযানে পাকিস্তানের অন্তত ১১টি বায়ুসেনাঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১০০ জনের বেশি জঙ্গি নিহত হয় বলে দাবি করা হয়। শেষ পর্যন্ত ইসলামাবাদের অনুরোধে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি।

ভারতের তরফে আগেই জানানো হয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। গত মাসে লালকেল্লার অদূরে গাড়িবোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী স্পষ্ট করে বলেন, প্রয়োজন পড়লে ‘অপারেশন সিঁদুর ২.০’ শুরু করতে প্রস্তুত ভারতীয় সেনা। তাঁর বক্তব্য, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের যে কোনও অভিযানে সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে। এই প্রেক্ষাপটেই সিএফআর-এর রিপোর্টকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালেও ভারত-পাক সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ থাকতে পারে। বিশেষ করে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি যে কোনও সময় সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে।

এদিকে ‘অপারেশন সিঁদুর ২.০’ নিয়ে ভারতের সেনা মহলের মন্তব্যে উদ্বেগ বেড়েছে পাকিস্তানে। পশ্চিমাঞ্চলীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মনোজ কুমার কাটিয়ারের বক্তব্যের পর পাক সেনা এলওসি জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রাওয়ালকোট, কোটলি ও ভিম্বর সেক্টরে নতুন করে কাউন্টার-আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেম (সি-ইউএএস) বসানো হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ৩০টিরও বেশি অ্যান্টি-ড্রোন ইউনিট মোতায়েন করেছে পাকিস্তান।

এছাড়া, ভারতের হামলায় পাক ড্রোন ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসার পর সেগুলি শক্তিশালী করতে তুরস্ক ও চিনের সঙ্গে নতুন ড্রোন ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে ইসলামাবাদ বলে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে, কাশ্মীর পরিস্থিতি, সাম্প্রতিক সামরিক অভিজ্ঞতা এবং দুই দেশের কঠোর অবস্থানের নিরিখে ২০২৬ সালেও ভারত-পাক সম্পর্ক যে সংঘাতের ছায়ায় ঢাকা থাকতে পারে, সেই ইঙ্গিতই স্পষ্টভাবে দিচ্ছে সিএফআর-এর রিপোর্ট।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন