সমকালীন প্রতিবেদন : ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসেই হবে– এমনই ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার ‘বঙ্গভূমি’তে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি দাবি করেন, ওই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আসনে জয় পেয়ে বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় আসবে। যদিও নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি, তার আগেই একজন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতার মুখে ভোটের সময়সূচি ঘোষণাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে।
সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত শাহ তুলে ধরেন ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলায় বিজেপির রাজনৈতিক উত্থানের পরিসংখ্যান। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বিজেপি পেয়েছিল ১৭ শতাংশ ভোট ও মাত্র ২টি আসন। ২০১৬ সালের বিধানসভায় তা নেমে আসে ১০ শতাংশ ভোট ও ৩টি আসনে। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ শতাংশ এবং আসন সংখ্যা হয় ১৮। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পায় ৩৮ শতাংশ ভোট ও ৭৭টি আসন। ২০২৪ সালের লোকসভায় ৩৯ শতাংশ ভোট পেলেও আসন সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১২-তে। এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই শাহের দাবি, ২০২৬ সালে বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে বাংলায় সরকার গঠন করবে।
ভাষণের বড় অংশ জুড়েই ছিল অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ। অমিত শাহের কড়া মন্তব্য, “বাংলার সীমান্ত দিয়ে যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তা শুধু রাজ্যের সমস্যা নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন।” তিনি বলেন, এমন সরকার দরকার, যারা অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করবে– “মানুষ তো দূরের কথা, একটা পাখিও যেন সীমান্ত পেরোতে না পারে।” শাহ স্পষ্ট করে দেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে অনুপ্রবেশই হবে বিজেপির সবচেয়ে বড় ইস্যু। শুধু আটকানো নয়, অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে সরাসরি রাজ্য সরকারকে দায়ী করে অমিত শাহ অভিযোগ তোলেন, বাংলার ভৌগোলিক মানচিত্র ও জনবিন্যাস বদলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে এবং রাজ্য সরকার তা প্রশ্রয় দিচ্ছে। সীমান্তে ফেন্সিং না হওয়া নিয়েও রাজ্য সরকারের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে তোলেন তিনি। শাহের বক্তব্য, “আপনারা জমি দেননি বলেই সীমান্তে বেড়া দেওয়া যাচ্ছে না। এর দায় কি নেবেন না?”
মতুয়া সমাজের নাগরিকত্ব নিয়েও আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসআইআর ও ভোটার তালিকা ঘিরে তৈরি হওয়া আশঙ্কার মধ্যে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “মতুয়াদের কোনও ভয় নেই। তাঁরা শরণার্থী, তাঁরা ভারতের নাগরিক। এটা বিজেপির প্রতিশ্রুতি। কেউ তাঁদের ক্ষতি করতে পারবে না।” একই মঞ্চে উপস্থিত বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও মতুয়াদের নাম বাদ পড়লে ফের নাগরিকত্ব দিয়ে ভোটার তালিকায় তোলার আশ্বাস দেন।
ভাষণের শুরুতে বাঙালি আবেগে হাত রেখে অমিত শাহ স্মরণ করেন ১৯৪৩ সালের এই দিনে পোর্ট ব্লেয়ারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলনের কথা। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে ‘সিন্ডিকেট’ সংস্কৃতির অভিযোগ তোলেন তিনি। দাবি করেন, ২০২৬ সালের ১৫ এপ্রিল বিজেপি সরকার গঠন হলে ‘বঙ্গ গৌরব’ ও ‘বঙ্গ সংস্কৃতি’র পুনর্জাগরণ ঘটবে। তাঁর কথায়, “স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ও শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্নের বাংলা গড়ে তুলব।”
অন্যদিকে, অমিত শাহের এই দাবিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর এটি আরও একটি ব্যর্থ হতে চলা বঙ্গ সফর।” সব মিলিয়ে, ভোটের দিনক্ষণ থেকে শুরু করে অনুপ্রবেশ, নাগরিকত্ব ও ক্ষমতা দখলের অঙ্ক– অমিত শাহের এই সাংবাদিক সম্মেলন ঘিরে বাংলার রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াল।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন