Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশে অশান্তির আবহ, চট্টগ্রামে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র

 

Closed-Indian-visa-center

সমকালীন প্রতিবেদন : জুলাই আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা তথা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে ঘিরে উত্তাল বাংলাদেশ। ক্রমবর্ধমান অস্থির পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বড় সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিল্লি। নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিচার করে রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল চট্টগ্রামের ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক)। একই সঙ্গে সিলেটের ভারতীয় উপদূতাবাস ও ভিসা আবেদন কেন্দ্রে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে খবর।

রবিবার আইভ্যাকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই সাময়িকভাবে এই পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব আবেদনকারীর ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারিত ছিল, তাঁদের জন্য পরবর্তী সময়ে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাই কমিশনারের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির জেরে সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই রবিবার থেকে ভিসা কেন্দ্রের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ফের পরিষেবা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, অশান্তির আশঙ্কায় সিলেটের ভারতীয় উপদূতাবাস ও ভিসা কেন্দ্রে নিরাপত্তা আঁটসাঁট করেছে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, “বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে কোনও তৃতীয় পক্ষ অশান্তি ছড়াতে না পারে, সেই কারণেই ভারতীয় উপদূতাবাস এবং ভিসা কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে।”

‌উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে উত্তেজনা ছড়ায়। ওই রাতেই গণ অধিকার পরিষদের তরফে ভারতের উপদূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ‘বিডিনিউজ ২৪’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামের খুলসী এলাকায় ভারতীয় উপ-হাই কমিশনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ হয়। 

অভিযোগ, সেখানে আওয়ামী লিগ ও ভারত-বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়। এমনকি উপ-হাই কমিশনের দফতর লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। উত্তেজনার আঁচ ছড়ায় সিলেটেও। তার পর থেকেই সেখানে ভারতীয় উপদূতাবাস, সহকারী হাই কমিশনারের বাসভবন এবং শোভনীঘাট এলাকার ভিসা আবেদন কেন্দ্রে কড়া পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ঢাকার যমুনায় অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রও একদিনের জন্য দুপুর ২টোর সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাই কমিশন’ কর্মসূচির ডাক ছিল। যদিও পরের দিন পরিষেবা পুনরায় চালু হয়। একইভাবে রাজশাহী ও খুলনায় ভিসা কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও তা দ্রুত খুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, হাদির মৃত্যুর পর থেকেই বাংলাদেশে সহিংসতার আগুন ছড়িয়েছে। ‘হাসিনা ফেরাও’ স্লোগান তুলে একাধিক প্রগতিশীল সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় দূতাবাস ও আওয়ামী লিগের দফতরেও হামলা হয়েছে বলে খবর। চট্টগ্রামে এক সাংবাদিককে খুন করা হয়েছে, ময়মনসিংহে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে এক হিন্দু যুবককে। ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের ভিসা পরিষেবা বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়তে পারেন বহু বাংলাদেশি নাগরিক, যাঁরা চিকিৎসা-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারতে আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলেই ইঙ্গিত প্রশাসনের।‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন