সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-র মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে ওপার বাংলা। অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় হাদির। এই খবরে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন করে শুরু হয় বিক্ষোভ ও অশান্তি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে দেশেই চিকিৎসা চললেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাদিকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে শেষরক্ষা হয়নি। উল্লেখ্য, হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিলেন। হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ইনকিলাব মঞ্চের সমর্থক ও আন্দোলনকারীরা ঢাকার শাহবাগে জড়ো হন।
সংগঠনের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “ওসমান হাদি শহীদ হলে বাংলাদেশের নিপীড়িত ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে শাহবাগে সমবেত হতে হবে।” বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ‘তুমি কে আমি কে, হাদি হাদি’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো’– এমন স্লোগানে মুখরিত হয় রাজধানী।
ধীরে ধীরে এই বিক্ষোভ ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক সূত্রের দাবি, রাতভর বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চলে। সেই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে পরিস্থিতির ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের একাংশ সংবাদমাধ্যমকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
ঢাকার শাহবাগ এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘প্রথম আলো’-র কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর অফিসেও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের খবর মিলেছে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অগ্নিসংযোগের জেরে দুই সংবাদমাধ্যমের অনলাইন কার্যক্রম কার্যত ব্যাহত হয় এবং শুক্রবার সংবাদ প্রকাশও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়।
এছাড়াও ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িসহ একাধিক স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। কারওয়ান বাজারে ‘প্রথম আলো’-র দফতরে রাত প্রায় ১১টা নাগাদ কয়েকশো বিক্ষোভকারী হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভবনের একাধিক তলায় ভাঙচুর হয় এবং ভিতরে থাকা সাংবাদিক ও কর্মীরা কিছু সময়ের জন্য আটকে পড়েন।
হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র সংগঠনগুলিও বিক্ষোভে নামে। ‘জাতীয় ছাত্র শক্তি’ নামের একটি সংগঠন শোক মিছিল বের করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করে তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করে। সংগঠনের অভিযোগ, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে প্রশাসন ব্যর্থ।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মহম্মদ ইউনূস। তিনি শরিফ ওসমান হাদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের এক নির্ভীক ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। নিহতের পরিবার, বিশেষত স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশবাসীর প্রতি সংযম ও ধৈর্য বজায় রাখার আহ্বান জানালেও বাস্তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন