সমকালীন প্রতিবেদন : রাজ্য সফরে এসে ফের একবার ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ‘২০০ আসন’-এর লক্ষ্য সামনে রেখে বিজেপি কর্মীদের মাঠে নামার বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কলকাতা জোনের কর্মী সম্মেলনে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, বিজেপি থামার নয়। ছাব্বিশের ভোটের আর বেশি দেরি নেই, তার আগেই বঙ্গ বিজেপির আদি-নব্য দ্বন্দ্ব মেটানো এবং সংগঠনকে ঢেলে সাজানোই এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রধান লক্ষ্য।
সোমবার রাতে কলকাতা পৌঁছান অমিত শাহ। সফরের মূল উদ্দেশ্য– নেতা ও কর্মীদের কাছে ছাব্বিশের রোডম্যাপ স্পষ্ট করে তুলে ধরা। বুধবার সকালে কলকাতার এক হোটেলে দলের সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর আলাদা বৈঠক হয় রাজ্যের চার মুখ– শমীক ভট্টাচার্য, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষকে নিয়ে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভূপেন্দ্র যাদব, সুনীল বনসল ও বিপ্লব দেব। সূত্রের খবর, প্রত্যেকের বক্তব্য আলাদা করে শোনেন শাহ। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই বৈঠকে মতুয়াগড়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাংসদ ও বিধায়ক এবং রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ অনুপস্থিত ছিলেন।
কলকাতার সায়েন্স সিটিতে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে মহানগরের চারটি সাংগঠনিক জেলা– কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, কলকাতা উত্তর শহরতলি এবং যাদবপুর– এই চার এলাকার কর্মী ও নেতৃত্ব হাজির ছিলেন। এই চার জেলায় মোট ২৮টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এখান থেকেই অমিত শাহ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন– এই এলাকাগুলি থেকে অন্তত ২০টি আসন জিততে হবে বিজেপিকে।
মঞ্চ থেকে কর্মীদের উদ্দেশে শাহ বলেন, “আমরা যদি ৩ আসন থেকে ৭৭ আসনে পৌঁছাতে পারি, তাহলে ৭৭ থেকে ২০০ আসনে পৌঁছানো অসম্ভব কেন হবে?” তাঁর এই বক্তব্যে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা ছড়াতে চেয়েছে দল। শুধু ভাষণেই থেমে থাকেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সাংসদ-বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বেশ কিছু কড়া নির্দেশও দেন তিনি।
সূত্রের খবর, বিজেপি বিধায়কদের নিজেদের এলাকায় কাজ বাড়াতে বলা হয়েছে। সপ্তাহে অন্তত চারদিন নিজ নিজ কেন্দ্রে থাকতে হবে, করতে হবে কমপক্ষে পাঁচটি পথসভা। পাশাপাশি আগামী দু’মাসে যোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারলে ২০২৬-এর নির্বাচনে টিকিট পাওয়া কঠিন– এই বার্তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, প্রার্থী বাছাইয়ে এবার ‘যোগ্যতা’ই শেষ কথা।
এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের মতে, অতীতে প্রার্থী নির্বাচনের সময় নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ক্ষোভ এড়াতেই এবার আরও সতর্ক কেন্দ্র। এমনকী আগামী নির্বাচনে একাধিক বিধায়কের আসন বদল এবং প্রাক্তন সাংসদদেরও নিজ নিজ কেন্দ্রে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
ভাষণে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন অমিত শাহ। তাঁর দাবি, “এই রাজ্যে দুটো জিনিস সবচেয়ে ভয়ঙ্কর– অনুপ্রবেশ আর দুর্নীতি।” কলকাতার নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কলকাতা আর নিরাপদ নেই। অনুপ্রবেশ বাড়লে সাধারণ মানুষই বিপদে পড়বেন। এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে গোড়া থেকে এই সরকারকে উপড়ে ফেলতে হবে।”
তৃণমূলের ‘মা-মাটি-মানুষ’ স্লোগানকেও কটাক্ষ করেন শাহ। বলেন, “মা আজ বিপন্ন, মাটিতে অনুপ্রবেশের দাপট। তাই মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে।” কর্মীদের উদ্দেশে সাংগঠনিক বার্তা দিয়ে তিনি জোর দেন বাড়ি-বাড়ি যোগাযোগ বাড়ানোর উপর।
সবশেষে আত্মবিশ্বাসের সুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনও রকম সমঝোতার প্রশ্ন নেই। প্রার্থী যেই হোক, তাকে জেতাতে হবে। “লিখে নিন, এবার বাংলায় বিজেপিই সরকার গড়বে”– এই বার্তা দিয়েই কর্মীদের চাঙ্গা করেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্দিষ্ট আসনভিত্তিক লক্ষ্য বেঁধে এবং কড়া সাংগঠনিক নির্দেশ দিয়ে বিজেপি স্পষ্ট করে দিল– ২০২৬-এর আগে সংগঠন মজবুত করাই এখন দলের প্রধান অগ্রাধিকার।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন