সমকালীন প্রতিবেদন : বিজেপিকে কটাক্ষ ও কড়া হুঁশিয়ারি—দুটি একসঙ্গে শোনাল বনগাঁর সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর গলায়। এসআইআর–কে ঘিরে রাজ্যজুড়ে তৈরি হওয়া আশঙ্কা ও জল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ফের আশ্বাস দিলেন, তাঁর জীবিতাবস্থায় বাংলার সাধারণ মানুষের অধিকারে কোনও আঘাত হানতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে অভিযোগ তুললেন, এসআইআর–এর আড়ালে বিজেপি গোপনে এনআরসি–র মতো চক্রান্ত চালাচ্ছে।
মঙ্গলবার বনগাঁর ত্রিকোণ পার্কে তৃণমূলের জনসভায় দাঁড়িয়ে শুরুতেই মমতা জানান, হেলিকপ্টার না পেয়ে শেষ মুহূর্তে সড়কপথে তাঁকে বনগাঁ আসতে হয়েছে। তাঁর কথায়, “ভোটের আগে থেকেই সংঘাত শুরু করে দিয়েছে। হেলিকপ্টার আটকে দেওয়া হলো। তবে ভালোই হয়েছে—রাস্তায় মানুষের সঙ্গে দেখা করতে করতে এলাম। জনসংযোগ বাড়লো।”
এর পরেই কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের দিকে সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার সঙ্গে খেলতে এসো না। আমি যে খেলাটা খেলব, তোমরা ধরতেও পারবে না, ছুঁতেও পারবে না।” মমতার দাবি, টাকা ঢাললেও এ রাজ্যে বিজেপি ভোটে জিততে পারবে না, কারণ মানুষ এখন সব বুঝে গিয়েছেন।
সভায় মমতা ফের দাবি করেন, এসআইআর স্বাভাবিক নিয়মে করতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগার কথা, যা আগে থেকেই তিনি বারবার বলেছেন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে এটি চালু করে গোপনে এনআরসি–র মতো পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। তাঁর অভিযোগ, “এসআইআর–এর নামে বাংলার মানুষকে ভয় দেখিয়ে, নথি না থাকা নিয়ে সমস্যা তৈরি করে নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
খসড়া তালিকা প্রকাশের পর পরিস্থিতি “ভয়াবহ” হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বুথ–লেভেল অফিসারদের কাজের ক্ষেত্রেও নানা বাধা তৈরি হচ্ছে। ইন্টারনেট না থাকা, নথি আপলোড করতে না পারা, নামের অদলবদল—সব কিছুর পিছনে রয়েছে “সিস্টেমেটিক গড়মিল।” তাঁর অভিযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ এআই ব্যবহার করে ভুল নথি ‘আসল’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
এসবের পরও সভায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে মমতার আশ্বাস— “যাঁরা গত লোকসভা ভোটে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের নাম বাদ যাওয়ার প্রশ্নই নেই। নতুন নামও তোলা হবে। খসড়া তালিকা বেরোলে রাজ্য সরকার মানুষের পাশে দাঁড়াবে।” তিনি আরও জানান, প্রয়োজন হলে ‘দুয়ারে সরকার’-এর মতো প্রকল্প চালিয়ে প্রত্যেককে নথি পেতে সাহায্য করা হবে।
এ দিন নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা টেনে মমতা বলেন, তিনি BLO–র দেওয়া এনিউমারেশন ফর্ম হাতে পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এখনও পূরণ করেননি। কারণ—“মানুষ আতঙ্কে আছে, তাঁদের আগে নিশ্চিন্ত করা জরুরি।” নিজের ফর্ম পূরণ না করলেও সাধারণ মানুষকে ফর্ম পূরণ করার কথা বলেন। বনগাঁ অঞ্চলের মতুয়া জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেও বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ১০০ টাকা করে নিয়ে নকল মতুয়া কার্ড বিলি করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে—এই কার্ড দেখালেই ভোটার কার্ড হয়ে যাবে। মমতার মন্তব্য—“পুরোটাই ভাঁওতা। মানুষকে বাংলাদেশি বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে।”
এদিন নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব যার, সে-ই এখন বাংলাকে কব্জা করার চেষ্টা করছে। বিজেপির অফিস থেকেই লিস্ট ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। বিএলও–দের জেলে ঢোকানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” বিএলও–দের অসুস্থ হয়ে পড়া, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাও তুলে প্রশ্ন তোলেন তিনি—“আর কত প্রাণ যাবে?” এদিন মমতা দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা করেন, “বাংলাকে আঘাত করলে প্রত্যাঘাত হবেই… গোটা দেশ হেলিয়ে দেব।”









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন