সমকালীন প্রতিবেদন : রাজ্যের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব কলকাতা বইমেলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। আগামী ২২ জানুয়ারি উদ্বোধন হতে চলেছে ৪৯তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা, যা চলবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী এবং নানা ক্ষেত্রের গুণিজন।
সোমবার কলকাতার একটি নামী হোটেলে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয় মেলার দিনক্ষণ ও বিস্তারিত পরিকল্পনার। উপস্থিত ছিলেন গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, কলকাতায় অবস্থিত আর্জেন্টিনা দূতাবাসের দুই প্রতিনিধি এবং অন্যান্য বিশিষ্টজন। তাঁদের উপস্থিতিতেই উদ্বোধন করা হয় এবারের থিম কান্ট্রি ‘আর্জেন্টিনা’র সরকারি লোগো।
সল্টলেকের করুণাময়ী বইমেলা প্রাঙ্গণেই হবে এবারের আয়োজন। এ বছরই প্রথম থিম দেশ হিসেবে অংশ নিচ্ছে আর্জেন্টিনা। ভারত তথা বাংলার সঙ্গে আর্জেন্টিনার সম্পর্ক ঐতিহাসিক—বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভিক্টোরিয়া ওকোম্পোর সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সেই বন্ধনকে দৃঢ় করেছে। পাশাপাশি, খেলার (বিশেষত ফুটবল) সূত্রেও বাংলার মানুষের মনে আর্জেন্টিনার প্রতি আলাদা টান। আয়োজকরা বলেন, ফুটবলের জগতে দিয়েগো মারাদোনা ছিলেন সেই বন্ধনের প্রতীক, আর তাঁর উত্তরসূরি লিওনেল মেসি আগামী ডিসেম্বরেই ভারত সফরে বাংলার মাটিতে পা রাখতে চলেছেন–যা এই সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও গভীর করবে।
মেলা আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে, এবারের বইমেলায় অংশ নেবে ব্রিটেন, আমেরিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, কলম্বিয়া, পেরু, জাপান, থাইল্যান্ডসহ লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশ। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের প্রকাশকরাও নিয়ম মতো অংশগ্রহণ করবেন—দিল্লি, তামিলনাড়ু, গুজরাট, বিহার, অসম, ওড়িশা, ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্য থেকে আসবে বহু নামী প্রকাশনা সংস্থা। থাকবে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন, শিশুদের জন্য চিলড্রেনস প্যাভিলিয়ন এবং প্রতিদিনের মতোই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উল্লেখযোগ্যভাবে, এ বছরও মেলায় থাকছে না বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। যদিও আয়োজকরা জানাচ্ছেন, অন্য কয়েকটি দেশ ও রাজ্যের সঙ্গে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে।
২০২৫ সালের বইমেলায় রেকর্ডসংখ্যক বইপ্রেমী এসেছিলেন–প্রায় ২৭ লক্ষ মানুষ ঘুরেছিলেন মেলায়, বই বিক্রির অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২৩ কোটি টাকা। সেই সাফল্যে যেমন গর্বিত আয়োজকরা, তেমনই এবার কিছুটা চিন্তিতও, কারণ অনেক নতুন প্রকাশক অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রাঙ্গণের জায়গা সীমিত হওয়ায় নতুন স্টল বরাদ্দ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে গিল্ড। বইমেলার অন্যতম জনপ্রিয় অংশ ‘কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি। এতে অংশ নেবেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, অনুবাদক, সমালোচক ও চিন্তাবিদরা।
অন্যদিকে, আগামী ২০২৭ সালে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা পা দেবে সুবর্ণজয়ন্তীতে। সেই উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে গিল্ড। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ময়দানে আয়োজিত বইমেলার পুরনো আলোকচিত্র নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। নির্বাচিত ছবিগুলি প্রকাশিত হবে ২০২৭ সালের স্মারক সংকলনে এবং সেরা দশ আলোকচিত্রকারকে পুরস্কৃত করা হবে। ছবি পাঠানোর শেষ তারিখ ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫।








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন