সমকালীন প্রতিবেদন : রাজধানী দিল্লির হৃদয়স্থলে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকা। সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের গেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় মুহূর্তে আগুন ধরে যায় গাড়িটিতে, আর তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে থাকা আরও কয়েকটি গাড়িতেও। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরনো দিল্লির জনবহুল এলাকায়।
দমকলের একাধিক ইঞ্জিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানো গেলেও, বিস্ফোরণের অভিঘাতে বেশ কয়েকজনের নিহত এবং আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে তদন্তকারীরা সম্ভাব্য নাশকতার দিকও খতিয়ে দেখছেন। ঘটনাস্থলে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছেন এনআইএ এর গোয়েন্দারা।
এরই মধ্যে ঘটনাটির সঙ্গে যুক্ত এক ভয়ঙ্কর জঙ্গি নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। জম্মু ও কাশ্মীর ও হরিয়ানা পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন তিন চিকিৎসক এবং এক ইমাম। তাদের মধ্যে ফরিদাবাদের আল ফালাহ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা. মুজাম্মিল শাকিল, আরও এক কাশ্মীরি চিকিৎসক, এক মহিলা চিকিৎসক ডা. শাহিন এবং এক ইমাম রয়েছেন। পুলিশের সন্দেহ, এরা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ ও আনসার গজওয়াত-উল-হিন্দ-এর সক্রিয় মডিউলের সঙ্গে যুক্ত।
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩৬০ কেজি বিস্ফোরক। কিন্তু তদন্ত যত গভীর হয়েছে, ততই বেরিয়ে এসেছে বিস্ফোরকের পাহাড়—মোট ২৯০০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট! ফরিদাবাদের ডা. মুজাম্মিলের ভাড়া নেওয়া বাড়ি থেকেই মিলেছে এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। তিন মাস আগে তিনি সেই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১৪ বস্তা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, একটি একে-৪৭ রাইফেল ও ৮৪ রাউন্ড গুলি, ৪৮টি আইইডি তৈরির উপকরণ, একাধিক টাইমার, ব্যাটারি ও তারের বান্ডিল, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রবণ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই মহিলা চিকিৎসকের গাড়ি থেকেও উদ্ধার হয়েছে একটি একে-৪৭ রাইফেল।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তদন্তে উঠে এসেছে এক ভয়ঙ্কর “হোয়াইট-কলার টেরর ইকোসিস্টেম”—যেখানে চিকিৎসক, অধ্যাপক ও ছাত্রদের মতো শিক্ষিত পেশাজীবীরা ‘দাতব্য কাজ’ ও ‘সামাজিক সংস্থা’-র আড়ালে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অর্থ ও অস্ত্র পাচারের কাজ করছিলেন। অর্থ লেনদেন হতো চিকিৎসা ও একাডেমিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক ও অস্ত্রসম্ভার ইতিমধ্যেই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে এনআইএ ও এনএসজি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ইউএপিএ, অস্ত্র আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিস্ফোরণের পর থেকে রাজধানীজুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। লালকেল্লা-সহ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র ও সরকারি দপ্তরগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী। গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, দিল্লি ও কাশ্মীর ছাড়াও অন্য রাজ্যেও এই নেটওয়ার্কের ছায়া ছড়িয়ে থাকতে পারে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের কিছু ঘণ্টা আগেই দিল্লিতে সম্ভাব্য বড়সড় জঙ্গি হামলার ছক ভেস্তে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল নিরাপত্তা সংস্থা। সেই দিনই রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটায় প্রশ্ন উঠছে গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঘিরে। এই ঘটনার পর মোদী সরকারের আমলে প্রথমবার রাজধানী শহরে সন্ত্রাসবাদী হামলার আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। তদন্ত চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়, আর গোটা দেশ তাকিয়ে আছে লালকেল্লার ছায়ায় ঘটে যাওয়া এই বিস্ফোরণের রহস্য উদ্ঘাটনের দিকে।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন