Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১-এর ঐতিহাসিক রায়: শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারে

 

Hasina-sentenced-to-death

সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ এক ঐতিহাসিক এবং বিতর্কিত রায় ঘোষণা করেছে। আদালত শেখ হাসিনাকে "মানবতাবিরোধী অপরাধ" দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, যা রাজনৈতিক ও আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে এক বিশাল পালাবদল হিসেবে দেখা হচ্ছে।  

ট্রাইবুনাল হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনে, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, মৃত্যু-চেষ্টা, নির্যাতন, “অন্য অমানবিক কাজ” এবং নির্দিষ্ট ছাত্রদের বিশেষভাবে হত্যা করার নির্দেশ। বিচারপতিরা তাদের রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, হাসিনা ছিলেন “সিস্টেমেটিক এবং সুসংগঠিত” একটি পরিকল্পনার শীর্ষে। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও পুলিশ একযোগে দমনমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিল। 

আদালত বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী (পুলিশ) হত্যাকাণ্ড করেছিল এবং তাদের মধ্যে এমন উস্কানিমূলক নির্দেশ ছিল যা গুরুতর সহিংসতার দিকে পরিচালিত করেছিল। রায়ে সমালোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ জনের মৃত্যুর সম্ভাব্যতা, যা ট্রাইবুনাল এবং প্রসিকিউশন উভয়ই উল্লেখ করেছেন। 

হাসিনা তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় এই রায়কে “পক্ষপাতদুষ্ট” ও “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে অভিহিত করেছেন। হাসিনা দাবি করেছেন, আদালত “গঠিত” এবং এতে তাদের পক্ষে যথেষ্ট সুযোগ ছিল না। প্রসিকিউটর মহম্মদ তাজুল ইসলাম অংশীদার দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যদি প্রতিটি মৃত ব্যক্তির জন্য একটি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত, তাহলে হাসিনা-কে “১,৪০০ বার” শাস্তি দেওয়া উচিত ছিল; যেহেতু তা আইনগতভাবে সম্ভব নয়, তাই একক দণ্ডই ন্যায্য। 

এই রায় রাজনৈতিকভাবে খুবই সংবেদনশীল। সমালোচকরা বলছেন, এটি একটি “ক্যাঙারু আদালত” হিসেবে কাজ করেছে এবং বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মান ও স্বচ্ছতার আলোকে প্রশ্নবিদ্ধ। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর দণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া কী হবে, তার নির্দিষ্ট সময় ও কৌশল এখনও স্পষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রতিবেশী দেশগুলো এই রায় গুরুত্ব সহকারে দেখছে, বিশেষত “গণতান্ত্রিক অধিকার”, “আইনি নিরাপত্তা” এবং “নিরপেক্ষ বিচার” বজায় রাখা হয়েছে কি না, সে প্রসঙ্গে।

রায়ে আওয়ামী লীগ তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে এটি “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” এবং “অনৈতিক বিচার”। তারা সাধারণ জনগণকে প্রতিবাদে আহ্বান করেছে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে সতর্ক করেছে। এমন এক সময়ে রায় এসেছে যখন দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ইতিমধ্যেই বাড়ছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায়ে বড় ধরনের জনগুরুতর প্রতিক্রিয়া এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। 

যারা রায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন, তারা বলছেন এটি গণতান্ত্রিক পুনরবাস্তবায়নের প্রতীক, শাসকদেরও আইনের আওতায় আনা যাবে এমন এক যাত্রার সূচনা। আর যারা বিরোধিতা করছেন, তারা বলছেন বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

বাংলাদেশে আজকের রায় শুধুমাত্র আইনগত সিদ্ধান্তই নয়, এটি রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মাইলফলক। একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে এবং সেটি “মানবতাবিরোধী অপরাধ” এর জন্য। তবে প্রশ্ন এখন মূলত এখানেই– এই রায় কি সত্যিকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, নাকি রাজনীতি ও প্রতিহিংসার নতুন অধ্যায় শুরু করবে? ভবিষ্যতে আপিল বা আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জে কী ফল হবে, তা দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়েই চোখ রাখছে।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন