সমকালীন প্রতিবেদন : রেলযাত্রীদের সুবিধার্থে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ভারতীয় রেল। এবার থেকে নিশ্চিত ট্রেন টিকিটের ভ্রমণের তারিখ অনলাইনের মাধ্যমে বদল করা যাবে এবং এর জন্য কোনও অতিরিক্ত বাতিল ফি দিতে হবে না। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট তারিখের জন্য বুক করা টিকিটে কোনও কারণে যাত্রা করা সম্ভব না হলে, সেটি বাতিল করে নতুন টিকিট কেটে নেওয়ার ঝামেলায় আর পড়তে হবে না। একই টিকিটেই নতুন তারিখে ভ্রমণ করা যাবে।
কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, নতুন এই ব্যবস্থা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তাঁর বক্তব্য, “বর্তমান নিয়মে যাত্রীরা প্রায়শই টিকিট বাতিল ও পুনরায় বুকিং করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। অনেক সময় ভ্রমণ করাটাও কঠিন হয়ে পড়ে। যাত্রীদের স্বার্থে আমরা এই নীতি বদলাতে চলেছি।”
বর্তমানে রেলের নিয়ম অনুযায়ী, যাত্রার পরিকল্পনা বদল হলে যাত্রীদের পুরনো টিকিট বাতিল করে নতুন তারিখের জন্য নতুন টিকিট কাটতে হয়। এতে বাতিলকরণের সময় অনুযায়ী ভাড়ার একটি অংশ কেটে নেওয়া হয় এবং নতুন তারিখে নিশ্চিত টিকিট পাওয়াও অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এই সমস্ত জটিলতা থেকে মুক্তি মিলবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি ২০ নভেম্বর পাটনা গামী ট্রেনের একটি কনফার্ম টিকিট থাকে এবং আপনি যদি ২৫ নভেম্বর যাত্রা করতে চান, তবে নতুন টিকিট বুক করার প্রয়োজন হবে না। আপনি অনলাইনে সেই টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করে একই টিকিটে নতুন তারিখে ভ্রমণ করতে পারবেন।
তবে রেলমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, নিশ্চিত টিকিট পরিবর্তনের পর নতুন তারিখেও নিশ্চিত আসন পাওয়ার গ্যারান্টি থাকবে না। সেটি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আসন প্রাপ্যতার উপর। পাশাপাশি, যদি নতুন তারিখের ভাড়া বেশি হয়, সেই পার্থক্য যাত্রীকেই বহন করতে হবে। এই নীতি কার্যকর হলে কোটি কোটি যাত্রী উপকৃত হবেন, বিশেষত যাঁরা ভ্রমণের পরিকল্পনা পরিবর্তনের কারণে বারবার টিকিট বাতিল করতে বাধ্য হন।
বর্তমান ব্যবস্থায় টিকিট বাতিল করলে যাত্রীদের যে খরচ বহন করতে হয়, তা-ও কম নয়। উদাহরণস্বরূপ – এসি ফার্স্ট ক্লাস বা এক্সিকিউটিভ ক্লাস টিকিট বাতিল করলে ₹২৪০ + জিএসটি, এসি টু টিয়ার বা ফার্স্ট ক্লাসে ₹২০০ + জিএসটি, এসি থ্রি টিয়ার বা চেয়ার কারে ₹১৮০ + জিএসটি, স্লিপার ক্লাসে ₹১২০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ₹৬০ কেটে নেওয়া হয়।
এছাড়া, ট্রেন ছাড়ার ৪৮ থেকে ১২ ঘণ্টা আগে টিকিট বাতিল করলে ভাড়ার ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। আর ১২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে বাতিল করলে কাটতির অঙ্ক আরও বাড়ে। একবার চার্ট তৈরি হয়ে গেলে সাধারণত ফেরত মেলে না। নতুন ব্যবস্থায় এসব অতিরিক্ত খরচ ও আর্থিক ক্ষতি থেকে যাত্রীরা মুক্তি পাবেন।
শুধু নতুন তারিখের আসন প্রাপ্যতা থাকলে যাত্রা করা যাবে, এবং ভাড়ার পার্থক্য থাকলে তা গুনতে হবে। রেলমন্ত্রকের মতে, এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে রেল ভ্রমণ আরও যাত্রীবান্ধব হবে এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা বদলানোর স্বাধীনতাও অনেকটাই বাড়বে। ফলে, ট্রেন যাত্রা আরও সহজ, নমনীয় ও ঝামেলামুক্ত হবে সাধারণ মানুষের কাছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন