সমকালীন প্রতিবেদন : দীর্ঘ ২৩ বছর পর ফের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের পথে হাঁটল নির্বাচন কমিশন। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গ-সহ মোট ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার থেকেই। সোমবার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এই ঘোষণা করেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দুই নির্বাচন কমিশনার এস.এস. সান্ধু এবং বিবেক যোশী সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকেরা।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ‘স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) বা বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরনো ভোটার তালিকার সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। বাংলার পাশাপাশি তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, কেরল, লাক্ষাদ্বীপ, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি এবং আন্দামান-নিকোবর— এই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতেও একই প্রক্রিয়া চালু হচ্ছে। সোমবার রাতেই এই রাজ্যগুলির ভোটার তালিকা ‘ফ্রিজ’ করা হচ্ছে।
কমিশনের বক্তব্য, এবার মূল লক্ষ্য দুটি— কোনও বৈধ ভোটার যেন বাদ না পড়েন। আর একজনও অবৈধ ভোটার যেন তালিকায় না থাকেন। অর্থাৎ, প্রতিটি নাম নতুন করে যাচাই করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, এটি কোনও রুটিন সংশোধন নয়, বরং অতীতের সমস্ত ত্রুটি সংশোধনের জন্য একটি ‘অ্যাডভান্স রিভিশন উদ্যোগ’।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকা ও ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত তালিকা মিলিয়ে দেখা হয়েছে— দুই তালিকার মাত্র ৫২ শতাংশ তথ্যই মিলে গেছে। রাজ্যের বর্তমান মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭.৬ কোটি। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক ভোটারের তথ্যই যাচাই করা বাকি। এখনও জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার তালিকা যাচাই সম্পূর্ণ হয়নি, যেখানে আরও প্রায় ৪০ লক্ষ ভোটার রয়েছেন। ফলে বাংলায় মোট প্রায় ৩.৫ কোটি ভোটারকে যাচাইয়ের আওতায় আনা হচ্ছে।
তুলনায়, বিহারে গত বছর প্রায় ২ কোটি ভোটারকে যাচাই করতে হয়েছিল বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এর আগে গত সপ্তাহে দিল্লিতে দেশের সমস্ত রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের নিয়ে দুটি প্রস্তুতি বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সেই বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাংলাসহ ১২ রাজ্যে এসআইআর চালুর। এই দ্বিতীয় প্রস্তুতি বৈঠকই ছিল শেষ ধাপ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, পশ্চিমবঙ্গে শেষবার এই ধরনের বিশেষ নিবিড় সংশোধন হয়েছিল ২০০২ সালে। প্রায় ২৩ বছর পর ফের সেই পথে ফিরছে কমিশন। গত এক দশক ধরে দেশের কোথাও এ ধরনের সংশোধন প্রক্রিয়া আর চালু হয়নি। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত।
এব্যাপারে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে বিজেপির ভাবনা। তাঁদের দাবি, বিজেপি মনে করে প্রায় এক কোটি ‘অনুপ্রবেশকারী’— বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে আসা মানুষ— ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন, আর এই বিশেষ রিভিশনের উদ্দেশ্য সেই নামগুলি বাদ দেওয়া। অন্যদিকে, কমিশনের দাবি, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এর উদ্দেশ্য কেবলই ‘স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা’।
বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই শুরু হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি। কমিশনের সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরল, তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরি— এই রাজ্যগুলিতে বিধানসভা ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে বিশেষ নিবিড় সংশোধনের মাধ্যমে ভোটার তালিকার ত্রুটি দূর করাই এখন কমিশনের প্রধান লক্ষ্য।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন