সমকালীন প্রতিবেদন : রাজ্যে এসআইআর চালু হতেই নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বনগাঁ মহকুমার উদ্বাস্তু ও মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে। নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তির আবহে তাদের অনেকেই দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তবে এই অস্থির পরিস্থিতিতে আশ্বাসের বার্তা দিয়েছেন মতুয়া ঠাকুরবাড়ির অন্যতম সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, “উদ্বাস্তুদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। সিএএ-র (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) মাধ্যমে প্রকৃত উদ্বাস্তু মানুষ প্রত্যেকে নাগরিকত্ব পাবেন।” শান্তনু ঠাকুরের এই বার্তার পর থেকেই বনগাঁ মহকুমাসহ উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক এলাকায় মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত বহু মানুষ সিএএ ফর্ম পূরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন। জানা গেছে, অনেকেই ইতিমধ্যেই স্থানীয় কেন্দ্রে গিয়ে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০০২ সালের আগে ভারতে এসেছিলেন এমন বহু উদ্বাস্তু পরিবারের প্রয়োজনীয় নথি সে সময় তৈরি হয়নি। পরবর্তীতে আধার বা ভোটার পরিচয়পত্র থাকলেও ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় দেখা দিচ্ছে বিভ্রান্তি। অনেকেই মনে করছেন, আগেভাগে সিএএ ফর্ম পূরণ করাই এখন সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া বলেন, “যারা প্রকৃত উদ্বাস্তু, তাঁদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। উদ্বাস্তু ও মতুয়ারা সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবেনই। ভয়ের কারণ একমাত্র অনুপ্রবেশকারীদের।”
তবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার অভিযোগ এনেছে। দলের বক্তব্য, সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে এবং বিভ্রান্ত করে বিজেপি রাজনীতিতে লাভ তুলতে চাইছে। তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, “মানুষকে আতঙ্কিত করে, নাগরিকত্বের নামে ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি চালাচ্ছে বিজেপি।”
অন্যদিকে বিজেপির দাবি, উদ্বাস্তু ও মতুয়া সম্প্রদায়ের নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করতেই তারা সচেতনতা অভিযান চালাচ্ছে। তাদের মতে, সিএএ-ই একমাত্র বৈধ পথ যা প্রকৃত শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দেয়। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, গোটা প্রক্রিয়াটি এখনও অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। সেই কারণেই বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। নাগরিকত্ব আবেদন, নথি যাচাই ও ভোটার তালিকা সংশোধনের বিভিন্ন ধাপ নিয়ে যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
তবুও শান্তনু ঠাকুরের বক্তব্যে কিছুটা ভরসা ফিরে পাচ্ছেন মতুয়া সমাজের মানুষ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, “ভারতের নাগরিকত্ব পেতে মতুয়ারা যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, ঠাকুরবাড়ি তাঁদের পাশে থাকবে।” এদিকে রাজনৈতিক মহলে এখন জোর আলোচনা– এসআইআর ও সিএএ-কে ঘিরে প্রকৃত সত্য কী, কে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে আর কে আশ্বাস দিচ্ছে? বিভাজিত জনমতের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে বনগাঁ ও তার আশপাশে– নাগরিকত্বের এই লড়াইয়ে আদৌ কি শেষ হবে উদ্বাস্তুদের দুশ্চিন্তা?
এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে যখন রাজ্যজুড়ে আলোচনা-আলোড়ন, ঠিক তখনই বনগাঁ মহকুমায় বিশেষ উদ্যোগ নিলেন বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া। উদ্বাস্তু ও মতুয়া সম্প্রদায়ের স্বার্থে তিনি শুরু করেছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সিএএ ফর্ম পূরণের ক্যাম্প। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বনগাঁর গান্ধীপল্লী এলাকায় ভিড় জমতে শুরু করে শতাধিক মানুষের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু জায়গায় আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য অর্থ নেওয়া হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই অশোক কীর্তনীয়ার উদ্যোগে খোলা হয়েছে বিনামূল্যের আবেদন কেন্দ্র, যেখানে নাগরিকত্বের আবেদন করা যাচ্ছে একেবারে বিনামূল্যে। বিধায়ক নিজে উপস্থিত থেকে ক্যাম্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তাঁর কথায়, “সিএএ উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করার আইন। বছরের পর বছর যারা কাগজের অভাবে বঞ্চিত, তাদের পাশে দাঁড়াতেই এই উদ্যোগ।” এদিন বনগাঁ, গোপালনগর, চাঁদপাড়া ও বাগদা-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এই ক্যাম্পে এসে আবেদন করেন।










কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন