Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারেই বাড়ছে মেরুদণ্ডের রোগ! তরুণ প্রজন্মে বাড়ছে ‘কাইফোসিস’-এর প্রবণতা

 

Excessive-use-of-mobile-phones

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতের ঘুমোনোর আগে পর্যন্ত— দিনভর হাতেই ফোন। অনলাইন গেম, সোশ্যাল মিডিয়া, সিরিজ দেখা— নানা কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনে চোখ রাখছে কমবয়সিরা। কিন্তু এই অভ্যাসই হয়ে উঠছে বিপদের কারণ। চিকিৎসকদের মতে, মোবাইল বা ল্যাপটপে দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে বসে থাকার ফলে তরুণদের মধ্যে বাড়ছে মেরুদণ্ডের গুরুতর বিকৃতি ‘কাইফোসিস’ বা ‘কাইফোস্কোলিওসিস’-এর প্রবণতা। নীরবে বাড়তে থাকা এই রোগ এখন বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কাইফোসিস এমন একটি অবস্থা, যেখানে মেরুদণ্ডের পিছনের, সামনের বা পাশের দিক বেঁকে যায়। সাধারণত সোজা থাকা মেরুদণ্ড ক্রমে বেঁকে গিয়ে শরীরের গঠন বিকৃত করে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগ এখন কেবল প্রবীণদের নয়, বরং কৈশোর ও তরুণ বয়সীদের মধ্যেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে— যার অন্যতম প্রধান কারণ স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে শরীর ঝুঁকিয়ে বসে থাকা বা শুয়ে ফোন দেখা এই রোগের মূল কারণগুলির একটি। স্কুল-কলেজের পড়ুয়া ও তরুণ কর্মজীবীরা অনেকে সারাদিন চেয়ারে বা বিছানায় বসে ফোনে গেম খেলা, ভিডিও দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ডুবে থাকেন। দিনে দিনে এর ফলে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা হারিয়ে যায়, পেশির স্বাভাবিক ভর কমে আসে এবং দেহের ভঙ্গি বিকৃত হতে শুরু করে।

কাইফোসিসের প্রাথমিক উপসর্গ অনেক সময় সাধারণ ব্যথা বা ক্লান্তি হিসেবে দেখা দেয়, ফলে অধিকাংশ মানুষ গুরুত্ব দেন না। তবে নিচের কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি— ১. পিঠ ক্রমশ শক্ত হয়ে যাওয়া ও তীব্র ব্যথা অনুভব। ২. ফুসফুসে চাপ পড়ায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা। ৩. পেশিতে ব্যথা ও টান। ৪. সারাদিন অস্বাভাবিক ক্লান্তি। ৫. পায়ে অসাড়তা বা খিঁচুনি। ৬. সোজা হয়ে দাঁড়ানো বা হাঁটাচলায় সমস্যা; শরীর সামনে ঝুঁকে পড়া।

কিছু মাস আগে দিল্লিতে ১৯ বছরের এক তরুণের ক্ষেত্রে দেখা যায় একযোগে মেরুদণ্ডের যক্ষ্মা ও কাইফোসিসের জটিলতা। তাঁর ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত স্পাইনাল সার্জারির প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকদের মতে, এটি একক ঘটনা নয়— সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের প্রভাব শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরই নয়, শরীরের ওপরও মারাত্মক। চোখের সমস্যা, নিদ্রাহীনতা, স্থূলতা, এমনকি ডায়াবেটিস পর্যন্ত দেখা দিচ্ছে কমবয়সিদের মধ্যে। আর এখন যোগ হয়েছে মেরুদণ্ড বিকৃতির মতো জটিল রোগের ঝুঁকি।

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ— প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ওয়ার্ক আউট বা যোগব্যায়াম করা জরুরি। সঠিক ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো শেখা প্রয়োজন। পড়াশোনা বা কাজের মাঝে নিয়মিত বিরতি নেওয়া উচিত। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করা অভ্যাস করুন। পুষ্টিকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। 

আজকের ডিজিটাল যুগে মোবাইল আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, কিন্তু প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার যদি শারীরিক বিকৃতি ও স্থায়ী ব্যথার কারণ হয়ে ওঠে, তবে তার মূল্য ভয়ঙ্কর। তাই এখনই সতর্ক হওয়ার সময়— ‘স্ক্রিন টাইম’ নয়, নিজের শরীর ও মেরুদণ্ডকে সময় দিন। চিকিৎসকদের স্পষ্ট বার্তা, “প্রযুক্তি ব্যবহার করুন, তার দাস হবেন না।”



‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন