সমকালীন প্রতিবেদন : দীর্ঘ ৯ বছর পর রাজ্যে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হল রবিবার। ২০১৬ সালে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর প্রথম শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হলেও, সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি ধরা পড়ে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে গোটা নিয়োগ বাতিল হয়ে যাওয়ায় আটকে যায় হাজারো প্রার্থীর ভবিষ্যৎ। তাই এবারের পরীক্ষা ঘিরে পরীক্ষার্থীদের মনে স্বাভাবিকভাবেই ছিল উদ্বেগ ও আতঙ্ক। তবে আপাতত রবিবার নির্বিঘ্নেই শেষ হল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-র নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা।
রাজ্যের মোট ৬৩৬টি কেন্দ্রে দুপুর ১২টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় দেড়টায়। বিশেষভাবে সক্ষম প্রার্থীরা আধঘণ্টা অতিরিক্ত সময় পান। তাঁদের পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর ২টায়। কোথাও কোনও গোলযোগ বা অনিয়মের খবর মেলেনি। বনগাঁ মহকুমায় পাঁচটি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়— বনগাঁ কলেজ, বনগাঁ হাইস্কুল, কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, গাইঘাটা হাইস্কুল এবং গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশন। প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রশাসনের তরফে পরীক্ষার্থীদের দেহ তল্লাশি করে ঢোকানো হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে। তবে দিন বনগাঁ হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রের একটি ঘরে একই নাম এবং একই ছবিযুক্ত এক পরীক্ষার্থীর দুটি আলাদা রোল নম্বর লক্ষ্য করা যায়। আর তা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
চাকরি-বাতিলের পর এটাই প্রথম শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। বহু নতুন পরীক্ষার্থীর পাশাপাশি চাকরি-হারা প্রার্থীরাও এদিন পরীক্ষায় বসেন। তবে যাঁদের নাম ইতিমধ্যেই দাগি প্রার্থীর তালিকায় ছিল, তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড আগেই বাতিল করে দেয় কমিশন। ফলে তাঁরা পরীক্ষায় বসতে পারেননি। ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ওএমআর শিট কারচুপির ঘটনার কারণে এবারে কমিশন বাড়তি সতর্কতা নেয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার্থীরা নিজেদের ওএমআরের কার্বন কপি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন। সেই মতো পরীক্ষার শেষে পরীক্ষার্থীরা কপি নিয়ে বের হন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের নিয়োগে ওএমআর শিট কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। সেই স্মৃতি এখনও দগদগে পরীক্ষার্থীদের মনে। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য— “ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েও ভরসা করতে পারছি না। আবারও অনিয়ম হলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাবে। এবার আমরা চাই, অন্তত স্বচ্ছভাবে নিয়োগ হোক।” তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় একাধিক স্কুল কার্যত শিক্ষকহীন হয়ে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের নিয়োগ বাতিল হওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে।
কমিশনের নতুন বিধি অনুযায়ী— নিয়োগের প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পর প্যানেল এবং ওয়েটিং লিস্ট কার্যকর থাকবে এক বছর। রাজ্য সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়ানো যাবে। প্যানেলের মেয়াদ শেষের পর ওএমআর শিট সংরক্ষিত থাকবে দু’বছর। ওএমআরের স্ক্যান কপি রাখা হবে ১০ বছর পর্যন্ত। কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী এদিন পরীক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পান।
সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের পর আর কোনও পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার কথা থাকলেও মানবিক কারণে নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট পরেও দু একজন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কোনওরকম ইলেকট্রনিক গ্যাজেট পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। সব মিলিয়ে রবিবার রাজ্যজুড়ে নির্বিঘ্নে শেষ হল বহু প্রতীক্ষিত নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা। তবে পরীক্ষার্থীরা আশা করছেন, ২০১৬-র মতো নয়, এবার যেন হয় সত্যিকারের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন