সমকালীন প্রতিবেদন : রবিবার গভীর রাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তান। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির পরিমাপ অনুযায়ী রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৩, যদিও আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে এর মাত্রা ৬। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে (ভারতীয় সময় রাত ১২টা ৪৭ মিনিটে) জালালাবাদ শহরের প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, ভূমি থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল।
ভূমিকম্পের তীব্রতায় নানগরহর প্রদেশসহ সীমান্তবর্তী পাকিস্তান ও ভারতের উত্তরাঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় রাতদুপুরে বহু মানুষ হঠাৎ ঘুম ভেঙে রাস্তায় নেমে আসেন। কম্পন অনুভূত হয় জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তর ভারতের অন্যান্য অংশেও।
নানগরহরের জনস্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। যদিও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি এই ধরনের ভূমিকম্প আরও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
মূল কম্পনের পর ২০ মিনিটের মধ্যেই প্রথম আফটারশক হয়, যার মাত্রা ছিল ৪.৫। রাতভর আরও বেশ কয়েক দফা কম্পন অনুভূত হয়েছে— রাত ১টা ৫৯ মিনিটে ৪.৩, ভোর ৩টে ৩ মিনিটে ৫ এবং ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে আরও একবার ৫ মাত্রার ভূমিকম্প। এদের উৎস ছিল ১০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গভীরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থান করায় আফগানিস্তান প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। প্লেটগুলির ক্রমাগত সংঘর্ষে ভেতরে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয় এবং চাপ চরমে পৌঁছালে ফাটল ধরে যায়— সেখান থেকেই শক্তির বিস্ফোরণ ঘটে, যার ফল ভূমিকম্প। মাত্র এক মাস আগেই দেশটিতে ৫.৫ এবং ৪.২ মাত্রার দুটি ভূমিকম্প হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, আফগানিস্তানের ঘনবসতিপূর্ণ উপত্যকা, দুর্বল নির্মাণবিধি এবং ভূকম্পন প্রতিরোধে অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি পরিস্থিতিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলছে। জলবায়ু পরিবর্তনও মাটির স্থিতিশীলতা ও ভূ-ভিত্তির সূক্ষ্ম ভারসাম্যে প্রভাব ফেলছে। ফলে পর্যবেক্ষণ বাড়ানো, সিসমিক মনিটরিং শক্ত করা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে আরও একবার ৬.৩ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। সেই ঘটনায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছিল। তালিবান সরকারের হিসাবে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়ালেও রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছিল, প্রকৃত সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। রবিবার রাতের ভূমিকম্পে তেমন বিধ্বংসী পরিস্থিতি তৈরি না হলেও, ধারাবাহিক আফটারশক ও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন