সমকালীন প্রতিবেদন : এই একটা পুজোয় মিশে গেল দুই বাংলা। বাংলাদেশি ছোঁয়ায় একটু একটু করে সাজছে মণ্ডপ। দুই দেশের বিবাদ ভুলে মহেঞ্জোদারোতে প্রাণ দিতে ব্যস্ত বাংলাদেশের সাতক্ষীরার শিল্পী দীপু মণ্ডল। তাক লাগাচ্ছে হুগলির আজাদ হিন্দ ক্লাবের ৭৫ তম বর্ষের পুজো প্রস্তুতি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কিভাবে দীপু ভারত বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেলেন মহেঞ্জোদারোয়? প্রথম পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর প্রশান্ত দাশগুপ্ত কলেজের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর রঙ্গজীব রায়ের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হয় দীপুর। বাংলাদেশের শিল্পী দীপুর বিভিন্ন ধরনের আর্ট দেখে রঙ্গজীব মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দুর্গাপুজোয় মণ্ডপ সজ্জার কথা বলেছিলেন।
আর ওই প্রস্তাবে রাজি হওয়াও দীপুর জন্য কিছুটা সহজ ছিল। কারণ, বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় যেখানে তাঁরা থাকেন, সেখানে এখন কোনও অশান্তি নেই। তবে গত এক বছর তাঁরা খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছেন। আর এখন তো দীপু বাংলার বুকে নিজের শিল্পসত্ত্বা দেখাচ্ছেন।
প্রাচীন সভ্যতা যে সময় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, সেই সময়কে মণ্ডপের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন দীপু। পাশাপাশি মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় যে আধুনিকতার ছোঁয়া ছিল, সেটাও ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মণ্ডপসজ্জায়। সিমেন্ট, বালি, চট-সহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে হুগলির চুঁচুড়ায় তৈরি হচ্ছে মহেঞ্জোদারো। কাজের সূত্রে দীপুও প্রতিদিন সমৃদ্ধ হচ্ছেন। সিনিয়ার আর্টিস্টদের থেকে অনেক কিছু শিখছেন। আরও ভালোভাবে নিজের ভুল ত্রুটি বুঝতে পেরে কাজ শিখতে পারছেন।
খুব স্বাভাবিকভাবেই গোটা বিষয়টা নিয়ে আশাবাদী ক্লাব কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছরই তাঁদের পুজোয় নতুন চমক থাকে। এবারে থিম ভাবনায় মহেঞ্জোদারো সভ্যতা। ফলে স্কুল পড়ুয়ারা এই মণ্ডপে গেলে অনেক কিছু শিখতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০ লক্ষ টাকা বাজেটের এই পুজো এবার প্ল্যাটিনাম জুবিলি বর্ষ পালন করছে। তাই জৌলুস আর রীতিনীতির সাথে আজাদ হিন্দ ক্লাবের পুজো হবে এবারেও সাড়ম্বরে।
ছবিটা অন্যরকম হতে পারত। কারণ, গত বছর হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। পদ্মা দিয়ে বয়ে গেছে কত জল। যাতায়াতও কমেছে দুটো দেশের মাঝে। কিন্তু দুর্গাপুজো আর দীপু দুটো দেশকে আবার যেন মিলিয়ে দিল।
প্রথাগত আর্টের ট্রেনিং নেই তো কি? মাত্র ৬ মাসের ওয়ার্কিং ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা দীপুর চোখেমুখে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারার অনাবিল আনন্দ। সেই কাজকে ছুঁয়ে দেখতে, সাক্ষী থাকতে পুজোর দিনগুলোতে আপনারাও পৌঁছতে পারেন হুগলির চুঁচুড়ার আজাদ হিন্দ ক্লাবের পুজোয়। বাংলাদেশী শিল্পীর শিল্পকর্মকে জানাতে পারেন কুর্নিশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন