সমকালীন প্রতিবেদন : বছরে কতবার বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ আসে বলুন তো ? গুনতে বসলে কেজো লোকেদের একটানা ছুটি খুব বেশি মেলেনা। শনিবার, রবিবার জুড়ে গেলে খ্রীষ্টমাসে একের কিছু বেশি, আর অন্যান্য সময়ও হিসেবটা মোটামুটি একইরকম। সেইদিকে দেখতে গেলে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দিতে হলে আদর্শ সময় পুজোর ছুটি। এইসময় হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো চারটে দিন তো ছুটি মেলে সঙ্গে আর কয়েকটা জুড়লেই মোটামুটি লম্বা ট্যুর হয়ে যায়।
এই বঙ্গে অন্তত দুর্গাপুজো মানেই সারা বছরের ক্লান্তি দূর করার একটা আদর্শ সময়। তাই পুজোর ছুটি মানেই অনেকের কাছেই বেড়াতে যাওয়ার দারুণ একটা পরিকল্পনা। তবে এখানে আবার অনেকেই ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাদের দুই-চাই। মানে রথ দেখা এবং কলা বেঁচা অর্থাৎ কিনা পুজোয় ঠাকুরও দেখবো আবার বেড়াতেও যাবো। আজকের প্রতিবেদন তাদের জন্য একবারে আদর্শ। কারণ দুদিনের ছুটিতে কোথায় যেতে পারেন সেই জায়গার হদিশ যেমন দেবো, তেমনই আবার হাতে সময় থাকলে পুজোর পুরো ছুটিটাই বাইরে কাটাতে পারবেন, পাবেন তেমন জায়গার হদিশও। শুরুটা করা যাক কাছের জায়গা দিয়েই।
ঝাড়গ্রাম –
একটা সময় ছিল যখন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য থাকলেও, অঘটনের ভয়ে এই জায়গা বেড়াতে যাওয়ার জন্য ঠিক করার ক্ষেত্রে অনেকেই দোনামোনায় ভুগতেন। তাই পছন্দের তালিকায় ঝাড়গ্রাম থাকতো অনেকটাই পেছনের সারিতে। কিন্তু বেশ কয়েকবছর হয়েছে বিভিন্ন বাদী-বিবাদিদের ভয় এখন একেবারেই নিশ্চিহ্ন। তাই এবছর পুজোর ছুটিতে আপনাদের ডেস্টিনেশন হয়ে উঠতেই পারে শাল-পিয়াল-কেঁদ গাছের জঙ্গলে ঘেরা ঝাড়গ্রাম। বিশেষ করে যারা পুজোর কটাদিন একটু শান্ত পরিবেশে কাটাতে চান এবং জঙ্গল ভালোবাসেন তাদের জন্য জঙ্গলমহল তো আদর্শ জায়গা।
এরসঙ্গে তো থাকছেই বেশ কয়েকটি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। সুবর্ণরেখা, তারাফেণী, কংসাবতী, ডুলুং- পর্যটকদের জন্য নদীর লিস্টটা বেশ লম্বা। শুধু তাই নয়, পুজোর মধ্যেই এখানেও পুজোর আমেজ থেকে দূরে যেতে হবে না। তারজন্য পৌঁছে গেলেই হবে ডুলুং নদীর ধারে কণকদুর্গার মন্দিরে। লোকমুখে প্রচলিত, এখানে অষ্টমীর দিন নিজের হাতে ভোগের মাংস রান্না করেন স্বয়ং মা দুর্গা। হাতে যদি মাত্র দিন-দুয়েকের ছুটি থাকে তাহলেই এতকিছু সম্ভব। থাকার বেশ কয়েকটি জায়গাও হয়েছে ঝাড়গ্রামে। ট্রেনে করে ঝাড়গ্রাম স্টেশনে নেমে সড়কপথে পৌঁছে যান আপনার ঠিক করা ডেস্টিনেশনে। নিজেদের বা ভাড়া গাড়ি করেও পৌঁছানো যায় ঝাড়গ্রাম।
বেনারস –
প্রচন্ড গরমে যেসব জায়গায় যাওয়ার কথা ভাবাই যায় না, বর্ষা শেষে বিশেষ করে পুজোর মরশুম শুরু হতেই সেই সমস্ত জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করা যেতেই পারে। তারইমধ্যে উত্তরপ্রদেশের বেনারসের নাম একেবারে শুরুতেই আসে। বাঙালির দীঘা, পুরী আর দার্জিলিং-য়ের পাশাপাশি নিজের এক পছন্দের জায়গা করে নিয়েছে বেনারস। মোটামুটিভাবে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ বা অক্টোবর থেকেই এখানে সিজন শুরু হয়ে যায়। অনেকেই আছেন যারা দীপাবলীর সময়টা এখানেই কাটান। কাশী বিশ্বনাথের মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির তো আছেই, তারসঙ্গে পুরো বেনারসই নানান দেবদেবীর মন্দির দিয়ে ঘেরা।
ভোরে বিশ্বনাথের মন্দিরে পুজো দেওয়া আর সন্ধ্যায় গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে সন্ধ্যারতি মন জুড়িয়ে দেয়, সঙ্গে নৌকাবিহার পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ। সারনাথ, রামনগর ফোর্ট আলাদা করে বেনারসের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ায়। বেনারসের স্ট্রিট ফুডও বেশ বিখ্যাত। কচুরি, নানারকমের চাট, রাববি লস্যি, বেনারসী পান ভোজন রসিকদের জিভে জল আনতে বাধ্য। হাওড়া স্টেশন থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেনে করেই পৌঁছে যাওয়া যায় বেনারস বা বারাণসীতে। তাই যারা এখনও কোথায় যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না, আবার পুজোর সময় পুজোর আমেজটাও চাইছেন তাদের জন্য বেনারস হয়ে উঠতে পারে পুজোয় বেড়ানোর আদর্শ জায়গা।
অমৃতসর–
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে সবার আগেই মাথায় আসে সময়টা, মানে কোন সময় কোথায় যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে পুজোর সময় অমৃতসর বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মন্দ নয়। কারণ অক্টোবর-নভেম্বর মাস অমৃতসরের জন্য সেরা সময় হিসেবেই ধরা হয়। এইসময় না থাকে বেশি গরম, না থাকে প্রচন্ড ঠান্ডা। পঞ্জাবের পবিত্র শহর অমৃতসরের গোল্ডেন টেম্পল বা স্বর্ণমন্দির দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে যদি মনের কোনায় জমে থাকে, তাহলে এবছর পুজোতেই তা পূরণ করতে ক্ষতি নেই। একইসঙ্গে দেখে আসতে পারেন জালিয়ানওয়ালাবাগ, ওয়াঘা বর্ডার। সারাদিন বেড়ানোর মাঝে অবশ্যই টেস্ট করে দেখুন সেখানকার স্ট্রিট ফুড। ফেরার পথে দেশের রাজধানী দিল্লিতেও ঝটিতি সফর করে ফিরতে পারেন।
নৈনিতাল–
অক্টোবর মাসে নৈনিতালের আবহাওয়া বেশ সুন্দর। বিভিন্ন ধরনের হ্রদে ঢাকা নৈনিতাল ভারতের লেক ডিস্ট্রিক্স নামে বেশ পরিচিত। কারণ এখানে একেক হ্রদের একেকরকম রূপ মনোমুগ্ধকর। পরিবারের সঙ্গে তো বটেই যারা একাই চষে বেড়ান দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত, তাদের জন্য আদর্শ জায়গা নৈনিতাল। গ্রীষ্মকালে যেহেতু ভিড় বেশি, তাই অক্টোবরে খানিকটা ফাঁকায় ফাঁকায় নিজের প্রিয় জায়গাকে উপভোগ করতে পারবেন বেশ ভালোভাবেই।
কুন্নুর–
সারাবছরে ক্লান্তি যদি পুজোর কটা দিনে দূর করতে চান আর মিশে যেতে চান সবুজ প্রকৃতির কোলে, তবে আর দেরি না করে ঘুরে আসুন তামিলনাড়ুর শৈলশহর কুন্নুরে। নীলগিরি জেলার শৈলশহর এটি, যা সবুজে মোড়া। আশেপাশে ঘুরে দেখতে গেলেই আপনার চোখে পড়বে বন্যফুল সঙ্গে শুনতে পাবেন নানাধরনের পাখির কোলাহল। তাই এই মনোরম দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করতে সবসময় সজাগ থাকতেই হবে। যারা ট্রেকিং করতে ভালোবাসেন তারা এখানে নিজের সখ মিটিয়ে নিতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন