সমকালীন প্রতিবেদন : জীবিকার তাগিদে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার এক বাঙালি শ্রমিক। কিন্তু সেখানেই ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে পুলিশের অত্যাচারের জেরে প্রাণ হারাতে হল তাঁকে—এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলল পরিবার। মৃত শ্রমিকের নাম গোলাম মন্ডল (৫২), বাড়ি হাবরা থানার অন্তর্গত আনোয়ারবেড়িয়া গ্রামে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর ধরে মুম্বইয়ে শ্রমিকের কাজ করতেন গোলাম মন্ডল। মাত্র সাত মাস আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সেই শোক সামলে ফের কাজে যান তিনি। তাঁর মেয়ে মর্জিনা খাতুন ও জামাইও মুম্বইতেই দিনমজুরির কাজ করেন। পরিবারের দাবি, গত ৯ জুন রাত দু’টো নাগাদ মুম্বই পুলিশের একটি দল তাঁদের বাসস্থানে হানা দেয় এবং গোলাম মন্ডলকে আটক করে নিয়ে যায়।
অভিযোগ, আধার কার্ড-সহ সমস্ত ভারতীয় পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও তাঁকে বাংলাদেশি বলে অভিযুক্ত করা হয়। বাংলায় কথা বলাতেই তাঁকে বাংলাদেশী বলে সন্দেহ করা হয় বলে অভিযোগ। পরবর্তী পাঁচ দিন থানায় আটক রেখে অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। মেয়ের অভিযোগ, “১৪ জুন পর্যন্ত বাবাকে ঠান্ডা জল আর পাউরুটি ছাড়া কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। মারধরও করা হয়েছে।”
১৪ জুন ছাড়া পেলেও মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন গোলাম। অসুস্থ অবস্থায় হাবড়ার বাড়ি ফেরার পর প্রথমে হাবরা হাসপাতালে ভর্তি হন, পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রবিবার রাতে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অশোকনগর, বারাসত হয়ে কলকাতায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর।
ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার মৃতের বাড়িতে যান ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ’-এর পাঁচ সদস্য। তাঁদের একজন সৈকত মিত্র বলেন, “মুম্বই পুলিশের অত্যাচার সহ্য করার পর হাবরায় ফিরে এসেছিলেন গোলাম মন্ডল। কলকাতায় তিনি নিজের মুখে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেন। এর কয়েকদিন পরেই তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটল। এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না”
সংগঠনের আর এক সদস্য সুমন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “মুম্বইতে কাজ করতে গিয়ে একজন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল। এই ঘটনাকে খুন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। তাঁর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মহারাষ্ট্র পুলিশের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হবে। গোলাম মন্ডলের ছেলে যাতে এই রাজ্যে একটি সরকারি চাকরি পায়, তারজন্য চেষ্টা চলছে।” গোলাম মন্ডলের পরিবারের আশা, রাজ্য সরকার তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন