সমকালীন প্রতিবেদন : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বনগাঁ পুরসভার একাধিক ওয়ার্ড। বিশেষ করে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের চিত্র অত্যন্ত দুর্বিষহ। হাঁটু জলের মধ্যে চলছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন। এই পরিস্থিতিতে রবিবার জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে যান বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া। তবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তিনি উলটো পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।
পরিদর্শনের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বিধায়ককে ঘিরে ধরে তীব্র বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রতি বছর বৃষ্টির সময় এই এলাকায় জল জমে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায়। কিন্তু গত চার বছরে এই এলাকায় একবারও আসেননি বিধায়ক। তাঁরা মনে করছেন, সামনেই বিধানসভা নির্বাচন, তাই এখন রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্যই তিনি এলাকায় এসেছেন।
একজন ক্ষুব্ধ বাসিন্দা বলেন, 'আমরা এতদিন ধরে সমস্যায় ভুগছি। কোথাও কেউ নেই। এখন ভোটের সময় আসছে, তাই নেতা এসেছেন ছবি তুলতে। সাধারণ মানুষের কথা কি শুধু ভোটের সময়ই মনে পড়ে?' তাঁদের আরও অভিযোগ, 'সমস্যার কথা বিধায়কের কাছে তুলে ধরার জন্য আমরা এগিয়ে গেলে বিধায়ক আমাদের কোনও কথা না শুনে এড়িয়ে চলে যান।'
এদিকে, ঘটনার পর বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দাবি করেন, এই বিক্ষোভ স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং পরিকল্পিত। তাঁর বক্তব্য, 'আমি মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস পরিকল্পনা করে কিছু লোকজনকে দিয়ে বিক্ষোভ করিয়েছে। এটা তাদের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আসলে তৃণমূল ভয় পেয়ে এমন কাজ করছে। আর আমি মানুষের আশীর্বাদে বিধায়ক হয়েছি। আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ হবে না।'
তিনি আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার কোনও সমাধান করেনি। পুরসভার দায়িত্বে তৃণমূল থাকলেও জলনিকাশির উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাঁর কথায়, “যদি পুরসভা এবং রাজ্য সরকার সময়মতো পদক্ষেপ নিত, তাহলে আজ এত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।”
তবে বিধায়কের এই অভিযোগ পুরোপুরি খারিজ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতা জানান, 'মানুষ নিজের চোখে যা দেখেছে, তার ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তৃণমূল এখানে কোনওভাবেই যুক্ত নয়। সাধারণ মানুষ নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে মাত্র।'
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বনগাঁর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তাপ বেড়েছে। বর্ষাকালে প্রতিবছরই জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহরের একাধিক এলাকা, কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে সেই সমস্যা থেকেই যাচ্ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। কে প্রকৃত দোষী—সেটা নিয়ে শুরু হয়েছে দোষারোপের রাজনীতি। তবে জলমগ্ন এলাকার মানুষ এখন উন্নয়ন চান, আশ্বাস নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন