Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

পুরোহিত ছাড়াই আদিবাসী গ্রামে এক ভিন্ন স্বাদের দুর্গাপুজো, কিন্তু কেন ?

 ‌

Durga-Puja-without-priest

সমকালীন প্রতিবেদন : বাঙালির শ্রেষ্ঠ ‌উৎসব দুর্গাপুজো। আর এই উৎসবকে ঘিরে কত আয়োজন। পুজোর কয়েকমাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। প্যান্ডেল, আলো, ঢাকি বায়না করতে হয় অনেক আগে থেকেই। আর সঙ্গে যাদের ছাড়া পুজোর কথা ভাবাই যায় না, তারা হলেন ব্রাক্ষ্মণ অর্থাৎ পুরোহিত। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের যোগাযোগের মাধ্যম নাকি তারাই। তাদের মাধ্যমেই সাধারণের বার্তা পৌঁছে যায় সর্বশক্তিমানের কাছে। তাই যেকোনও পুজোয় ব্রাক্ষ্মণ (পুরোহিত) মাস্ট। আর তা যদি হয় মা দুর্গার আরাধনা সেখানে পুরোহিতের আগে ভাল শব্দটি আপনা থেকেই জুড়ে যায়। 

সেই ব্রাক্ষ্মণ ছাড়াই নাকি দুর্গাপুজো ! তাও আবার হয় নাকি ? শুধু হয় না, তাই হয়ে চলেছে বছরের পর বছর ধরে। বীরভূমের লাভপুর থানার আদিবাসী গ্রাম সুঁদিপুর। প্রায় ১২০টি আদিবাসী পরিবারের বাস সেখানে। একটা সময় ছিল যখন ইচ্ছে থাকলেও মায়ের পুজোয় যোগ দেওয়ার উপায় ছিল না এই গ্রামের কোনও পরিবারের সদ্যদের। শুধুমাত্র ডাক পড়তো দশমীতে মায়ের বিসর্জনের দিন, তাও শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দশে। ধামশা, মাদল নিয়ে পৌঁছে যেতে হতো বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে বা ঘাটে। 

এমনকি ঘরের মেয়েকে নিজেদের ঘরে এনে পুজো করার ইচ্ছে থাকলেও তাও কোনভাবেই পূরণ করতে পারছিলেন না এই গ্রামের বাসিন্দারা। কারণ আদিবাসী গ্রামে মা দুর্গার পুজো করার জন্য মিলছিল না কোনও ব্রাক্ষ্ণণ পুরোহিত। কেউ আসতে রাজি ছিল না আদিবাসী গ্রাম সুঁদিপুরে। তাই যতো কষ্ট, আক্ষেপ সব মনের ভেতরেই চেপে রেখেছিলেন সেখানকার মানুষজন। 

বেশ কয়েক বছর এই অবস্থা চলে। আদিবাসী পরিবারের ৮ থেকে ৮০ সবাই তখন মুখিয়ে উমা মাকে ঘরে আনার আশায়। কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিল না। তবে ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয় তার প্রমাণ রেখেছেন এরা। সব বাধা পেরিয়ে মায়ের পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন এই গ্রামেরই কোঁড়া পরিবার। তারপর থেকে এই গ্রামে প্রতিবছর মা দুর্গার আরধনা হয়। পুজোর প্রতিদিন মন্ত্রোচ্চারণ করা হয় নিয়ম মেনে। এরজন্য কোঁড়া পরিবারের সদস্যরা পৈতে পর্যন্ত ধারণ করেন। 

প্রথাগতভাবে না হলেও, বংশ পরম্পরায় এইভাবেই মায়ের পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই পরিবারের সদস্যরা। আর তাদের সঙ্গে প্রতিবছর পুজোয় সামিল হয় গ্রামের বাকী প্রত্যেকটি পরিবার। মহা আনন্দে কাটে তাদের পুজোর এই কটাদিন। মাকে মন ভরে, প্রাণ ভরে ডাকতে পারেন তারা। কারণ এই কটা দিন সপরিবারে উমা থাকেন তাদের কাছে। তাই সব দুঃখ ভুলে এই কটাদিন শুধুই মায়ের সঙ্গে আনন্দে গা ভাসানো। 

এখানেই অবশ্য শেষ নয়। এতদিন যারা ব্রাত্য ছিলেন, এখন তাদের পুজো দেখতেই আশেপাশের গ্রাম থেকে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। এমনকি এই ভিন্ন ধরণের পুজোর সাক্ষী হতে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও দর্শনার্থীদের ভিড় জমে লাভপুরের সুঁদিপুর গ্রামে। সাবেকি আর থিমের পুজোর লড়াইয়ের মাঝে এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছে সুঁদিপুর গ্রামে আদিবাসীদের এই ভিন্ন স্বাদের দুর্গাপুজো।‌‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন