Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

পেট্রাপোল সীমান্তে সঙ্কটে শ্রমিক–ব্যবসায়ীরা, কেন্দ্রের আমদানি নির্দেশিকায় কর্মহীন হাজারো শ্রমিক পরিবার

 ‌

Workers-in-distress-in-Petrapole

সমকালীন প্রতিবেদন : ভারত সরকারের নতুন আমদানি নীতির জেরে সংকটে পড়েছেন পেট্রাপোল স্থলবন্দরের হাজার হাজার শ্রমিক। রেডিমেড গার্মেন্টস ও পাটজাত পণ্যসহ একাধিক দ্রব্য বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে আমদানি না করে জলপথে আনার নির্দেশ জারি হয়েছে সম্প্রতি। এর ফলে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল। ভেঙে পড়েছে শ্রমিকদের রুজি-রুটি, সংকটে পড়েছে গোটা বন্দর-নির্ভর অর্থনীতি।

দীর্ঘদিন ধরে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য ভারতে প্রবেশ করত। এসব পণ্য লোডিং-আনলোডিং, গুদামে সংরক্ষণ, নথিপত্র যাচাই ও ক্লিয়ারিংয়ের কাজে যুক্ত ছিলেন কয়েক হাজার স্থানীয় শ্রমিক, মজদুর ও ছোট ব্যবসায়ী। নতুন নির্দেশিকায় জলবন্দর দিয়ে পণ্য প্রবেশ করায় স্থলবন্দরের ভূমিকা অনেকটাই কমে গিয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে এইসব মানুষদের কাজের সুযোগ।

শ্রমিকদের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত একেবারে হঠাৎ করে কার্যকর হওয়ায় তাঁরা প্রস্তুত হওয়ার সুযোগও পাননি। বেশ কয়েক মাস ধরেই লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ নেই বললেই চলে। অনেকে ইতিমধ্যেই বাধ্য হয়ে পেশা বদলেছেন, কেউ কেউ আবার দিন আনা-দিন খাওয়া পরিবারে চরম সংকটে পড়েছেন।

এই অবস্থার প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় বিক্ষোভে সামিল হন শতাধিক শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি সঙ্গে ছিলেন একাধিক রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরাও। বিক্ষোভে সামিল হন ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। সবার একটাই দাবি — স্থলবন্দরের পুরনো আমদানি পদ্ধতি পুনরায় চালু করতে হবে এবং শ্রমিকদের কাজের স্থায়ী নিরাপত্তা দিতে হবে।

বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের দাবি, “জলপথ দিয়ে পণ্য এলে কিছু বড় শিল্পপতি সুবিধা পান বটে, কিন্তু পেট্রাপোলের মতো স্থলবন্দর-নির্ভর অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। শুধু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুফল নয়, স্থানীয় মানুষের জীবিকাও বিবেচনায় রাখতে হবে সরকারকে।”

এদিকে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, “সরকারের নীতির ফলে শুধু শ্রমিক নয়, আমদানি-রপ্তানি সংস্থাগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবন্দর দিয়ে মাল আনা মানেই খরচ বাড়ছে, সময় লাগছে বেশি। তার উপরে কাজ হারিয়ে মানুষ বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে নিরাপত্তার দিক থেকেও চিন্তার।”

শ্রমিকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি না মানা হলে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা। বিক্ষোভ চলবে ধারাবাহিকভাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে যেন স্থানীয় মানুষের জীবিকাকে বিসর্জন না দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিদিন কয়েকশো ট্রাক পণ্য আদানপ্রদান হতো। এই বন্দর শুধু দু’দেশের বাণিজ্যের কেন্দ্র নয়, বরং এই অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবারের জীবন ও জীবিকার প্রধান আশ্রয়স্থল। তাই সরকারের আমদানি নীতিতে এমন হঠাৎ পরিবর্তন স্থানীয় অর্থনীতিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এখন দেখার, শ্রমিকদের এই প্রতিবাদ কতটা গুরুত্ব দেয় সরকার এবং কবে ফিরতে পারে পেট্রাপোলের পুরনো ছন্দ।‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন