সমকালীন প্রতিবেদন : ভোটার তালিকায় নাম রাখতে গেলে ১১ টা নথি রাখতেই হবে গুছিয়ে। কি কি নথি? ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে আপনার নাগরিকত্ব বাতিল? তখন কি করবেন আপনি? বিহারের মতোই পশ্চিমবঙ্গে হলে, বিপদে পড়তে হবে না তো আপনাকে? ভোটার তালিকা ‘নিবিড় সমীক্ষা’ই ঘুরিয়ে দিচ্ছে খেলা। জেনে নিন কি কি নথি রেডি রাখতে হবে আপনাকে।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা আসলে কি? কারা প্রকৃত ভোটার, কাদের নাম তালিকায় থাকবে, কাদের নয়? তা নির্ধারিত হচ্ছে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ১১টা নথির ভিত্তিতে। এটাই ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ মানে এসআইআর। যে প্রক্রিয়া বিহারের ভোটার তালিকায় শুরু হয়েছে। আর এই নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। কমিশনের তরফে ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামছে না।
যে বিতর্কের মাঝে মানুষের জানার কৌতুহল বাড়ছে ১১ টা নথি নিয়ে। যে ১১টি নথির মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারি কর্মচারী বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হলে সেই পরিচয়পত্র। বার্থ সার্টিফিকেট, বৈধ পাসপোর্ট। তাছাড়া আপনার নামে ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগের কোনও সরকারি নথি সেটা ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসি-র নথিও গ্রাহ্য। যে কোনও বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া শিক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র যেখানে আপনার জন্মের সাল এবং তারিখের উল্লেখ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থায়ী বসবাসকারীর শংসাপত্র। তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত হলে তার শংসাপত্র। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (মানে এনআরসি তালিকায় নাম)। বনাঞ্চলের অধিকারের শংসাপত্র। রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের তৈরি করা পারিবারিক ‘রেজিস্টার’। আর সরকার প্রদত্ত জমি বা বাড়ির নথি মানে দলিল, পরচা ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে অনেকের প্রশ্ন, সবাইকেই কি এই নথি জমা দিতে হবে? না, সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককেই ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য উদ্বিগ্ন হতে হচ্ছে না। বলে রাখা দরকার, বিহারে ২০০৩ সালে এসআইআর হয়েছিল। তার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল ভোটার তালিকা। কমিশন জানিয়েছে, বিহারের ক্ষেত্রে ২০০৩ সালে জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের নাম থাকবে। অর্থাৎ, নিবিড় সমীক্ষা করা হচ্ছে তার পর থেকে শেষ দফা পর্যন্ত যাঁদের নাম উঠেছে, সেই ২২ বছরের সময়কাল ধরে। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। অতএব ধরে নেওয়া যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া শুরু হলে ২০০২ সালের ওই তালিকাকেই ‘নির্ভুল’ হিসাবে ধরবে কমিশন। যেমন হচ্ছে বিহারের ক্ষেত্রে।
যদিও ইতিমধ্যেই এই গোটা বিষয়টাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গেছে। বিহারের এসআইআর নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলছে বিরোধী শিবির। একইসঙ্গে কমিশন যে ১১টি নথি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্র, জমির দলিল বা বনাঞ্চলের অধিকারের শংসাপত্রে জন্মতারিখের উল্লেখ থাকে না। তা হলে সেই নথি দিয়ে কী ভাবে নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভোট দেওয়ার বয়স হয়েছে কি না? কিন্তু তাতে এই প্রক্রিয়া থেমে নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন