সমকালীন প্রতিবেদন : অনিল কুম্বলে ভাঙা চোয়াল নিয়ে খেলেছিলেন। ঋষভ পন্থ খেললেন ভাঙা পা নিয়ে। ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টের প্রথম দিন রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পান ঋষভ পন্থ। পরদিন সকালে জানা যায়, তিনি শুধু ম্যাচ থেকেই নয়, গোটা ইংল্যান্ড সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন। চিকিৎসকরা অন্তত ছয় সপ্তাহ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু দল যখন চাপে, তখন নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি পন্থ।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে ভারতের দ্রুত দু’টি উইকেট পড়তেই দেখা যায়, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠে নামছেন পন্থ। ভাঙা পা নিয়েই নেমে পড়লেন ব্যাট করতে! বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল ক্রিকেট বিশ্ব। তাঁকে ঘিরে তৈরি হওয়া নানা জল্পনা, আশঙ্কায় সাময়িক জল ঢেলে দিলেন ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক।
চোট সহ্য করেই ব্যাট চালিয়ে যান, যেন দেশের ডাকে নিজের সবটা উজাড় করে দিতে প্রস্তুত এক নিঃশর্ত সৈনিক। অথচ বুধবার ডান পায়ের পাতায় এতটাই আঘাত পেয়েছিলেন যে মাঠকর্মীদের গাড়িতে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। ১৯ ঘণ্টার ব্যবধানে বৃহস্পতিবার সেই পায়েই হেঁটে মাঠে নামলেন পন্থ! মাঠে নামলেন গোটা স্টেডিয়ামকে দাঁড় করিয়ে।
লড়াকু ইনিংস খেলে ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয় জিতে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন নজির গড়েছেন তিনি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি রান করা ভারতীয়র তালিকায় সকলের উপরে উঠে এলেন পন্থ। অ্যাওয়ে সিরিজে সবচেয়ে বেশি হাফসেঞ্চুরি করা উইকেটকিপার হিসাবেও সকলের উপরে রয়েছেন তিনি। ভারতের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড রয়েছে বীরেন্দ্র শেহওয়াগের। ১০৩টি টেস্টে মোট ৯০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে শেহওয়াগের সমসংখ্যক ছক্কা হাঁকানোর নজির রয়েছে পন্থের ঝুলিতে। তবে সদ্য টেস্ট থেকে অবসর নেওয়া রোহিত শর্মার অনবদ্য নজির ম্যাঞ্চেস্টারে ভেঙে দিলেন পন্থ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ভারতীয় ছিলেন রোহিত। বৃহস্পতিবার ভাঙা পা নিয়ে খেলতে নেমে রোহিতের নজির ভেঙে দেন ঋষভ।
ঋষভ পন্থকে এভাবে খেলতে দেখে ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশ্ন, কেন এমন অমানুষিক যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা ক্রিকেটারকে মাঠে নামতে বাধ্য করা হবে? যদিও আইসিসি নিয়ম অনুযায়ী পন্থকে মাঠে নামার জন্য বাধ্য করা হয়নি। কিন্তু নিয়মের ফাঁড়ায় ১০ জন ব্যাটারকে নিয়ে গোটা টেস্টে খেলতে হত ভারতকে।
এই ‘অসাম্য’ দূর করতেই বাধ্য হয়ে মাঠে নামতে হয় পন্থকে। ক্রিকেটভক্তদের একাংশের মতে, যদি উইকেটকিপার হিসাবে পরিবর্ত নামানো যায় তাহলে পরিবর্ত হিসাবে নামা উইকেটরক্ষককে ব্যাট করার অনুমতিও দেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, ২০১৭ থেকে উইকেটকিপারের পরিবর্ত নামানোর আইন এনেছে এমসিসি। এবার কি তাহলে সেই নিয়ম বদলাবে? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন