Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

অসীম ঘোষ হরিয়ানার রাজ্যপাল : বঙ্গ বিজেপির ইতিহাসে যোগ হল নতুন অধ্যায়

 

Governor-of-Haryana-Asim-Ghosh

সমকালীন প্রতিবেদন : দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকা অধ্যাপক অসীম ঘোষকে হরিয়ানার রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করল রাষ্ট্রপতি ভবন। সোমবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের রাজনীতি এবং বঙ্গ বিজেপির ইতিহাসে এ এক উল্লেখযোগ্য পালাবদল, কারণ দীর্ঘ রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার পরেও অসীম ঘোষকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে নিয়োগ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

রাজ্য বিজেপির শেষ নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন অসীম ঘোষ। এক সময় উত্তর কলকাতার শ্রীশচন্দ্র কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত এই প্রাবন্ধিক নেতা ১৯৯১ সালে বিজেপিতে যোগ দেন প্রভাকর তিওয়ারির হাত ধরে। সে বছরই কাশীপুর বিধানসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি, যদিও জিততে পারেননি। তবে সেই থেকেই তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক যাত্রা শুরু।

সুবক্তা এবং সংগঠক হিসেবে পরিচিত অসীম দ্রুতই দলের উচ্চপদে পৌঁছে যান। ১৯৯৬ সালে রাজ্য সম্পাদক, ১৯৯৮ সালে সহ-সভাপতি এবং অবশেষে ২০০০ সালে রাজ্য বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সভাপতি তপন শিকদার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির জেরে পদ ছাড়লে, প্রথমে সাংগঠনিক নির্বাচন ছাড়াই সভাপতির দায়িত্ব পান অসীম।

তবে ২০০০ সালে দলের সাংগঠনিক নির্বাচনে প্রবীণ নেতা সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৩৪ ভোটে জয় পান অসীম। সেই নির্বাচন ঘিরে রাজ্য বিজেপিতে স্পষ্ট বিভাজন দেখা যায়। সুকুমার শিবিরে ছিলেন শমীক ভট্টাচার্য, রাহুল সিংহ, কর্নেল সব্যসাচী বাগচী ও পরশ দত্তের মতো নেতারা। অপরদিকে, অসীমকে সমর্থন করেছিলেন তপন শিকদার এবং আরএসএস। নির্বাচনে জয়লাভের পর, বিরোধী শিবিরের নেতাদের নিজের কমিটি থেকে বাদ দেন অসীম।

২০০২ সাল পর্যন্ত রাজ্য সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর রাজ্য বিজেপির ক্ষমতা পুনরায় রাহুল-শমীকদের হাতে ফিরে আসে এবং তথাগত রায় সভাপতি নিযুক্ত হন। অসীম ঘোষকে যদিও জাতীয় স্তরের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়, তবে ধীরে ধীরে তিনি দলীয় বৃত্ত থেকে দূরে সরে যান। হাওড়া‌র বাসিন্দা এই প্রাক্তন অধ্যাপক প্রায় দুই দশক ধরে রাজনীতির মূল স্রোত থেকে দূরে থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য বিজেপির কিছু কর্মসূচিতে তাঁকে ফের সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা যায়।

বিশেষ করে, নতুন রাজ্য সভাপতির মনোনয়ন, নাম ঘোষণা এবং অভিনন্দন সভায় অসীম ঘোষের সক্রিয় উপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল জাগায়। বিজেপির অন্দরে তখন থেকেই তাঁর রাজ্যপাল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। শেষমেশ সেই জল্পনাই সত্যি হল সোমবার। এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে চতুর্থ ব্যক্তি রাজ্যপাল পদে নিযুক্ত হলেন। 

এর আগে, কংগ্রেস আমলে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় পাঞ্জাবের রাজ্যপাল হন। বিজেপি সরকারের সময় উত্তরপ্রদেশে রাজ্যপাল হয়েছিলেন বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী এবং পরে ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের রাজ্যপাল হন তথাগত রায়। হরিয়ানার মতো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়ে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি অসীম ঘোষ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন। তাঁর নিয়োগে বঙ্গ রাজনীতিতে ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এলেন এক সময় প্রায় বিস্মৃত এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন