Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

২৯ লক্ষ টাকার জিএসটি নোটিস এক সাধারণ সবজি বিক্রেতাকে!

 

GST-notice-to-vegetable-seller

সমকালীন প্রতিবেদন : রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি ঠেলায় সবজি বিক্রি করেই চলে সংসার। বড় কোনও দোকান নেই, নেই বড়সড় ব্যবসাও। অথচ সেই সাধারণ সবজি বিক্রেতার কাছেই জিএসটি কর্তৃপক্ষ চেয়ে বসেছে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা! ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কর্নাটকের হাভেরি জেলাজুড়ে। ভীত-সন্ত্রস্ত ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ।

একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সবজি বিক্রেতার নাম শঙ্করগৌড়া হাদিমানি। গত চার বছর ধরে হাভেরির এক মাঠের পাশে ছোট্ট একটি ঠেলা গাড়িতে সবজি বিক্রি করেন তিনি। তাঁর অধিকাংশ ক্রেতাই এখন নগদের বদলে ইউপিআই বা অন্য ডিজিটাল মাধ্যমে দাম মেটান। সম্প্রতি জিএসটি দপ্তর থেকে তাঁকে পাঠানো হয় একটি চিঠি। অভিযোগ, চার বছরে তাঁর দোকানে ১.৬৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। সেই হিসেবে তাঁর ২৯ লক্ষ টাকা জিএসটি বকেয়া রয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

এই ঘটনায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে যান শঙ্করগৌড়া। তিনি বলেন, “আমি তো সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে বিক্রি করি। প্যাকেটজাত নয়, কোনও প্রক্রিয়াজাতকরণও করি না। তাহলে জিএসটি কেন দিতে হবে?” তিনি আরও জানান, প্রতিবছর আয়কর সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দেন। তবুও এমন বিপুল পরিমাণ করের নোটিসে তিনি কার্যত দিশেহারা।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনও সবজি বিক্রেতা চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে সরাসরি তা প্যাকেটজাত না করে বা কোনও প্রক্রিয়া ছাড়াই বিক্রি করেন, তাহলে তার উপর জিএসটি প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ, শঙ্করগৌড়ার মতো খোলা বাজারের সবজি বিক্রেতার ক্ষেত্রে জিএসটি-র আওতায় পড়ার কথা নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি আরও একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, কর্নাটকের জিএসটি দপ্তর নজর রাখছে এমন সব ব্যবসায়ীদের উপর, যাঁরা ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ করছেন। কারণ, ডিজিটাল লেনদেন থেকেই মোট টার্নওভার অনুমান করা সহজ। চলতি বছরের ১২ জুলাই, রাজ্যের জিএসটি দপ্তর স্পষ্ট করে জানায়, যাঁদের বার্ষিক লেনদেন নির্দিষ্ট সীমা পেরিয়ে যাবে, অথচ তাঁরা রেজিস্ট্রেশন না করেই ব্যবসা চালিয়ে যান, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরপরই দেখা যায়, বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন ডিজিটাল লেনদেন এড়িয়ে নগদে লেনদেন শুরু করছেন, যাতে নজরদারি এড়ানো যায়। কর দপ্তর এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ জুলাই হুঁশিয়ারি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে— কর ফাঁকি রুখতে প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। এই ঘটনার পরে আতঙ্ক আরও বাড়ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহলে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর ফাঁকি দিতে চান না, শুধুমাত্র ডিজিটাল লেনদেনের কারণে তাঁদেরও জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে।

এব্যাপারে সেখানকার স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “ডিজিটাল লেনদেন করলে সরকার সুবিধা দেয় বলেছিল, এখন সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জিএসটি রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয়তা ও শর্ত আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আরও পরিষ্কারভাবে জানানো উচিত।” 

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের উচিত, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য স্পষ্ট নীতি ঘোষণা করা, যাতে ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত হলেও জিএসটি-র জটিলতায় পড়তে না হয়। আপাতত এই নোটিস ঘিরে শঙ্করগৌড়া হাদিমানির মতো অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন