সমকালীন প্রতিবেদন : আধুনিক জীবনের চাপে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে অল্প বয়সেই বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা, বাইরের তেলমশলা ভরা খাবার, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব–এই সবকিছুর ফলেই শরীর ধীরে ধীরে হয়ে পড়ছে দুর্বল ও রোগপ্রবণ। চিকিৎসকরা তাই নিয়মিত হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়–সুস্থ থাকতে ঠিক কতটা হাঁটলে উপকার হয়?
সাধারণভাবে প্রচলিত একটি ধারণা হলো, দিনে ১০,০০০ পা হাঁটলেই শরীর থাকবে সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু এই ধারণার পিছনে নেই কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট পাবলিক হেলথ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, সুস্থ থাকতে দিনে এতটা হাঁটার প্রয়োজন নেই। বরং তার অনেক কম হাঁটলেই মিলতে পারে চমকপ্রদ স্বাস্থ্যলাভ।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দিনে গড়ে ৭,০০০ পা হাঁটলে হৃদরোগজনিত কারণে আচমকা মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৪৭ শতাংশ কমে যায়। একইসঙ্গে স্মৃতিভ্রংশতা কমে ৩৮ শতাংশ, ঘনঘন পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে ২৮ শতাংশ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়াও হতাশা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো মারাত্মক অসুস্থতার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
গবেষণাটি জানাচ্ছে, দিনে মাত্র ৪,০০০ পা হাঁটলেই বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এমনকি একেবারে প্রাথমিক স্তরে মাত্র ২,০০০ পা হাঁটার অভ্যাস শুরু করলেও শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। প্রতি ১,০০০ পা হাঁটলেই ধীরে ধীরে শারীরিক সুস্থতা বাড়তে থাকে। শুধু শরীর নয়, হাঁটার প্রভাব পড়ে মনেও। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত হাঁটার ফলে মন-মেজাজ ভাল থাকে, উদ্বেগ-চিন্তা কমে যায় এবং মানসিক সুস্থতাও বজায় থাকে। এই অভ্যাস কর্মক্ষমতা ও ঘুমের গুণমান বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
বলা হচ্ছে, ১০,০০০ পা-র প্রচার ছিল বিজ্ঞাপনী কৌশল। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন যে, ১০,০০০ পা হাঁটার ধারণার উৎপত্তি কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে নয়। এটি শুরু হয় ১৯৬৮ সালের টোকিও অলিম্পিক্সের সময় এক জাপানি পেডোমিটার নির্মাতা সংস্থার বিপণন কৌশল থেকে। অর্থাৎ, এটি ছিল একধরনের বিজ্ঞাপন–যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
সাধারণ গতিতে হাঁটার পরিমাপ সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলছেন, একজন সুস্থ ব্যক্তি সাধারণ গতিতে হাঁটলে দিনে ৭,০০০ পা হাঁটতে প্রায় ৩-৩.৫ কিলোমিটার অতিক্রম করেন। এই পথ অনায়াসেই অতিক্রম করা সম্ভব দিনের শুরু বা শেষে আধঘণ্টা সময় বের করে। যাঁরা সারা দিন ব্যস্ত, তাঁদের জন্যও এটি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর একটি পথ।
হাঁটতে বেশি সময় লাগে না, লাগে না কোনও খরচও। দিনে আধঘণ্টা সময় বের করলেই শরীর ও মন—দু’টোকেই রাখা যায় সুস্থ। ব্যস্ত জীবনের মাঝে নিজের জন্য এইটুকু সময় দেওয়া শুধু স্বাস্থ্যের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এক অনন্য বিনিয়োগ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন