Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

কৃত্রিম গর্ভের যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞান! নবজাতককে বাঁচাতে যুগান্তকারী আবিষ্কার জাপান-অস্ট্রেলিয়ার

Artificial-insemination-system

সমকালীন প্রতিবেদন : একটা সময় পর্যন্ত যা ছিল কল্পবিজ্ঞান গল্পের বিষয়, সেটাই এবার বাস্তবের মুখ দেখাতে চলেছে। কৃত্রিম গর্ভ—এই অভাবনীয় প্রযুক্তি চিকিৎসাবিজ্ঞানে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার যৌথ গবেষণায় তৈরি হয়েছে এক নতুন প্রোটোটাইপ কৃত্রিম গর্ভব্যবস্থা, যার নাম দেওয়া হয়েছে ইভিই বা এক্স ভিভো ইউটেরাইন এনভায়রনমেন্ট।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, এটি কোনওভাবেই ‘মানবশিশু তৈরি’র যন্ত্র নয়। বরং, গর্ভধারণের নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া অর্থাৎ প্রিম্যাচিওর শিশুদের নিরাপদে বেড়ে উঠতে সাহায্য করতেই এই প্রযুক্তির উন্নয়ন। বর্তমানে যে শিশুদের গর্ভাবস্থার ২৪ সপ্তাহ বা তারও আগে জন্ম হয়, তাদের ক্ষেত্রে ইনকিউবেটরও কার্যকর হয় না। ফুসফুস সহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে তৈরি না হওয়ায়, অনেক শিশু মারা যায়, কেউ কেউ আজীবনের জন্য শারীরিক সমস্যায় ভোগে। সেই জায়গাতেই নতুন আশার আলো জাগাচ্ছে ইভিই।

এই কৃত্রিম গর্ভ ব্যবস্থায় শিশুটিকে রাখা হয় স্বচ্ছ তরল ভর্তি একটি বায়োব্যাগ-এর মধ্যে, যা মাতৃগর্ভের অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের অনুকরণে তৈরি। শিশুর নাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে একটি কৃত্রিম প্লাসেন্টা, যা অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বার করে দেয়—একেবারে মাতৃগর্ভের মতো। এতে করে শিশু কোনো বাড়তি শারীরিক চাপ ছাড়াই নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারে, যার ফলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনে ব্যাঘাত ঘটে না।

মানবশিশুর ক্ষেত্রে এখনও প্রয়োগ না হলেও, গবেষকরা ইতিমধ্যেই সফলভাবে ভেড়ার অপরিণত ভ্রূণ এই প্রযুক্তিতে বড় করে তুলেছেন। এই পরীক্ষার সাফল্য চিকিৎসাবিদ্যায় এক বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এই আশাজনক আবিষ্কারের সঙ্গে উঠে এসেছে একাধিক নৈতিক প্রশ্নও। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এই প্রযুক্তি কি তবে মানবজন্মের স্বাভাবিকতা ও স্বতঃস্ফূর্ততায় যন্ত্রের হস্তক্ষেপ ঘটাবে? ভবিষ্যতের পৃথিবীতে কি শিশুর জন্মও পুরোপুরি কৃত্রিম পরিবেশে ঘটবে?

গবেষকরা অবশ্য জানিয়েছেন, এখনই মানুষের উপর এই প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রশ্ন নেই। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর গবেষণা, দীর্ঘ সময় এবং নৈতিক মূল্যায়ন। তবে এই প্রযুক্তি যদি সফল হয়, তাহলে একথা বলা যেতেই পারে—প্রিম্যাচিওর শিশুদের জীবনরক্ষায় এটি হতে পারে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন। ভবিষ্যত বলবে, ইভিই কতটা বদলে দিতে পারে মানবজন্মের ইতিহাস। কিন্তু আপাতত, নিঃশব্দে ইতিহাস গড়ার পথে চিকিৎসাবিজ্ঞান।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন