সমকালীন প্রতিবেদন : সোনাক্ষী সিনহা, রণবীর সিং অভিনীত 'লুটেরা' সিনেমার দৃশ্যে দেখানো সেই রাজবাড়িতে একটা রাত কাটালে এক্সপেরিয়েন্সটা কেমন হয় বলুন তো? না না, শুধু রাত কেন? সেই প্রাচীন দেওয়াল, আল্পনা দেওয়া বিরাট নাটমন্দির, বড়-বড় ঝাড়বাতি আর রাজবাড়ির অন্দরমহলের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা ইতিহাসকে যদি দিনভর ছুঁয়ে থাকতে পারেন!
ডোন্ট ওরি! সব সুযোগ পাবেন। শুধু গ্যাঁটের কড়ি খরচ করলেই হবে কামাল। উইকেন্ড ডেস্টিনেশনে রাজবাড়িতে থাকা আর এলাহী খাওয়া দাওয়ার সুবন্দোবস্ত নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন। সঙ্গে থাকবে ঠিকানা আর পৌঁছানোর উপায়। একটা উইকেন্ড কাটুক না হয় ইতিহাসের খোঁজে। বিষয়টা কিন্তু বেশ হবে। কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে খুব বেশি দূরত্বে যেতে হবে না। কারণ, হুগলিতেই রয়েছে আভিজাত্য আর বাংলার ইতিহাসে মোড়া ইটাচুনা রাজবাড়ি। কেমন এই রাজবাড়ির অন্দরমহল?
উঁচু কড়িবরগার ছাদ থেকে প্রাচীন দেওয়াল, আল্পনা দেওয়া বিরাট নাটমন্দির থেকে বড়-বড় ঝাড়বাতি। দালানজুড়ে বিরাট-বিরাট বাতিস্তম্ভ দিয়ে সাজানো গোটা রাজবাড়ি। এখানেই শুটিং হয়েছিল সোনাক্ষী সিনহা ও রণবীর সিং অভিনীত ‘লুটেরা’ সিনেমার দৃশ্য। এই বাড়ির আনাচে-কানাচেই লুকিয়ে কত জানা অজানা ইতিহাস। দুটো অংশে বিভক্ত বাড়িটা। বাইরের মহলে কাছারি বাড়ি, হিসাবের ঘর ইত্যাদি। এগুলো পেরিয়ে তবেই পৌঁছতে হয় অন্দরমহলে। অন্দরমহলের জানালা ছোট ছোট। ভিতরে বসে বাইরের দৃশ্য দেখা গেলেও, বাইরে থেকে ভিতরে উঁকি দেওয়া কঠিন। বাড়ির মেয়েদের কথা ভেবে এভাবেই তৈরি ইটাচুনা রাজবাড়ি।
স্থানীয়রা বলেন বর্গীডাঙা। এই ‘বর্গীডাঙা’র সঙ্গেই জড়িয়ে ইটাচুনা রাজবাড়ির ইতিহাস। এই ইতিহাস সেই সময়ের, যখন চৌথ আদায়ের জন্য মরাঠা থেকে বর্গীর দল বারবার বাংলা আক্রমণ করত। ধনসম্পত্তি আদায় করে আবার ফিরে যেত নিজ দেশে। তাঁদের মধ্যেই কেউ কেউ আর ফেরেনি। তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে এখানে। তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল ইটাচুনা রাজবাড়ি। ইটাচুনা রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কুন্দ্রারা।
এই কুন্দ্রা থেকেই কুণ্ডু এসেছে। সবচেয়ে সফল শাসনকর্তা ছিলেন নারায়ণ কুণ্ডু। তাঁরই বংশধররা ১৭৬৬ সালে এই রাজবাড়ি তৈরি করেন। সেই সময় একে বলা হত বর্গীদের বাড়ি। এখন তার জায়গার নাম হয়ে গিয়েছে বর্গীডাঙা। নামে কি এসে যায়? অনুভূতিটাই তো আসল। ভেবে দেখুন তো। রাজবাড়িতে থাকছেন, খাচ্ছেন। পায়ের উপর পা তুলে, গল্পে মেতে উঠছেন। উফ্! হ্যাঁ; ভাড়া, খাওয়ার খরচ এসব জানতে চাইছেন তো?
তাহলে জেনে নিন বনেদি বাড়ির সাজসজ্জার সঙ্গে ঘরের নামগুলোও এখানে বেশ অদ্ভুত। মেজদিদি, বড়দিদি, মা, জ্যাঠামশাই, ছোটপিসি বিভিন্ন নাম ঘরগুলোর। চাইলে রাতও কাটাতে পারেন এখানে। ইটাচুনা রাজবাড়ির খাওয়া-দাওয়াও রাজকীয়। ইটাচুনা রাজবাড়ি যেতে গেলে আপনাকে আগে থেকে ঘর বুক করে যেতে হবে। ঘরের ভাড়া ৩,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। ইটাচুনা রাজবাড়ির অনলাইন ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি ঘর বুক করতে পারবেন। ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চের প্যাকেজ শুরু হয় ৫০০ টাকা থেকে। আর রাতের খাবারেও থাকে এলাহি আয়োজন। পোলাও, মাংস ইত্যাদি। ডিনারের প্যাকেজ শুরু হয় ৩৫০ টাকা থেকে।
কি? এই উইকেন্ডে ছুটবেন নাকি ইতিহাসের টানে? বেশ, লং ড্রাইভ ভালবাসলে কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে হালুসাই যেতে হবে। খন্যান স্টেশনের পথ। এই হালুসাই থেকে দশ মিনিট গেলেই পৌঁছে যাবেন ইটাচুনা রাজবাড়িতে। ট্রেনে চেপেও যেতে পারেন ইটাচুনা রাজবাড়ি। বর্ধমান মেন লাইনের যে কোনও ট্রেন ধরে নেমে পড়ুন খন্যান স্টেশন। খন্যান স্টেশন থেকে অটো বা রিকশা ধরে পৌঁছে যান ইটাচুনা রাজবাড়ি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন