সমকালীন প্রতিবেদন : গহীন অরণ্যে আপনি একা, আর আপনার থেকে কয়েক হাত দূরেই বসে বিশ্রাম নিচ্ছে বাঘ। কি ভয় পেয়ে গেলেন? নাকি এরকম অ্যাডভেঞ্চার ট্রিপে যাওয়ারই প্ল্যান করছিলেন আপনি? একটা দারুন অভিজ্ঞতা হতে পারে কিন্তু। চিড়িয়াখানা তো জলে ভাতে, যেকোনও ছুটিতে সন্তানকে ঘুরিয়ে আনুন জাতীয় উদ্যানে। একশৃঙ্গ গন্ডারের নুন চাটতে আসা থেকে হাতির পিঠে উঠে জঙ্গল সাফারি। বাঘের বিচরণ থেকে পেখম তুলে ময়ুরের নাচ; এইসব ক্যামেরাবন্দি করতে একদম ভুলবেন না। দেখবেন, ভ্রমণের সঙ্গে খুদের প্রকৃতিপাঠও হয়ে যাবে। তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? বরং আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে চটপট শেয়ার করে ফেলি জাতীয় উদ্যানের চারটে ঠিকানা।
চিড়িয়াখানায় স্বল্প পরিসরে হরেক জীবজন্তু দেখার সুযোগ পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু সে সব তো খাঁচাবন্দি বাঘ, সিংহ একরকম। কিন্তু খোদ বাঘ-সিংহ কিংবা হাতির ডেরায় ঢুকে বন্যপ্রাণ চাক্ষুষ করার আনন্দ, উত্তেজনা, রোমাঞ্চ এক রকম। স্কুলের লম্বা ছুটিটা কাজে লাগিয়ে সন্তানকে নিয়ে আপনি অনায়াসে বেরিয়ে পড়তে পারেন অরণ্য-ভ্রমণে।
১) বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানের নাম শুনেছেন? যাবেন তো বটে, তবে তার আগে জানিয়ে রাখা ভালো বাঘের ডেরা হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রদেশের একাধিক জাতীয় উদ্যান। বান্ধবগড়, কানহা, পেঞ্চের জঙ্গলের খ্যাতি রয়েছে বাঘের দর্শন পাওয়ার জন্য। তবে শুধু বাঘ নয়, বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানে লেপার্ড, চিতল, স্পটেড ডিয়ার, গউর, সম্বর, নীলগাই, হায়না, ফোর হর্ন অ্যান্টিলোপ সহ অজস্র বন্যপ্রাণী এবং কয়েকশো প্রজাতির পাখি রয়েছে। গরমের এই সময় বাঘ দেখার সম্ভবনা অনেক বেশি। প্রখর সূর্যালোকে জঙ্গলের আনাচকানাচে ছোটখাটো জলাশয় শুকিয়ে যায়। থাকে কয়েকটা মাত্র জায়গা। বাধ্য হয়ে বন্যপ্রাণীদের সেখানেই তেষ্টা মেটাতে আসতে হয়। তার ফলে বাঘ এবং বন্যপ্রাণ দেখার সুযোগও বেড়ে যায় অনেকটাই। তাহলে আর দেরি না করে আপনার সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে আসুন বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যানে। উপভোগ করুন একটা অ্যাডভেঞ্চারাস ট্রিপ।
২) বাঘ, সিংহের বাইরে এই জগতে অন্য অনেক বন্যপ্রাণ আছে, যাদের দেখার জন্য উৎসাহী পর্যটকেরা ছুটে যান বারংবার জাতীয় উদ্যানে। এই যেমন একশৃঙ্গ গন্ডার। এদের আস্তানা অসমের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান, সেটাও অনেকেই জানেন। তাই এবার গরমে ঢুঁ মারতে পারেন আপনি কাজিরাঙায়। মনে রাখবেন ইন্ডিয়ান বাইসন, হাতি, হরিণ সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল এই অরণ্যভূমি।
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ২০০৬ সালে টাইগার রিজ়ার্ভের স্বীকৃতিও পায়। এই অরণ্যাঞ্চলে বাঘের সংখ্যাও ক্রমশ বেড়েছে। তাছাড়া আর কি কি সুবিধা পেতে পারেন এখানে আপনি? জিপ সাফারির পাশাপাশি হাতির পিঠে চেপেও জঙ্গল ঘোরা যায় এখানে। একশৃঙ্গ গন্ডারের পাশাপাশি হাতি, হরিণও দেখতে পাওয়া যায়। বরাত ভাল থাকলে দেখা মিলতে পারে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারেরও। আর একটা জিনিস বলে দিই, ৫ বছরের বেশি বয়সীদের জিপ সাফারিতে আলাদা আসন ধার্য করা হয়, তার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই খরচ লাগে।
৩) এটাও খুব পরিচিত একটা নাম। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় রয়েছে। এই অরণ্য অভয়ারণ্যের তকমা পেলেও জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি পেতে সময় লেগে যায় আরও অনেকগুলো বছর। হাতি, গন্ডার, ইন্ডিয়ান বাইসন, ময়ূর, হরিণের বিচরণক্ষেত্র। এখানে কিভাবে ভুলতে পারবেন আপনি? জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে জিফ সাফারির পাশাপাশি হাতির পিঠে চেপে ঘোরার ব্যবস্থাও রয়েছে। তার জন্য বন দফতরের অফিসে গিয়ে বুকিং করতে হয়। অনলাইনেও বুকিং এর ব্যবস্থাও রয়েছে। জেনে রাখুন, সকালে এবং বিকেলে জিপ সাফারির ব্যবস্থা। সাফারিতে ছোটদের যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। তবে একেবারে ছোটদের হাতি সাফারির অনুমতি মেলে না এখানে। সেটা বুঝেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন।
৪) আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উদ্যান রণথম্ভোর। এটা রাজস্থানের দক্ষিণপূর্বে সওয়াই মাধোপুর জেলায় অবস্থিত। অসংখ্য বন্যপ্রাণ এবং অজস্র পাখির আবাস্থল হলেও, এই অরণ্যভূমির জনপ্রিয়তা কিন্তু বাঘের জন্যই। ১ হাজার ৩৩৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অরণ্য। বাঘ ছাড়াও চিতাবাঘ, হায়েনা, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র।
এবার বলি কখন কিভাবে ঘুরতে পারবেন? অরণ্যে ঘোরা এবং বন্যপ্রাণ চাক্ষুষ করার জন্য সকাল এবং দুপুরে জিপসি সাফারির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় রণথম্ভোর দুর্গ, ত্রিনেত্র গণেশ মন্দির। জিপ সাফারিতে ৫ বছরের কম বয়েসীদের জন্য কোনও খরচ ধরা হয় না। কিন্তু বয়স পাঁচের বেশি হলে তখন নির্দিষ্ট ভাড়া ধার্য করা হয়।
এই সবকিছু শেয়ার করার পর যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা উল্লেখ করছি, সেটা ভুল করেও ভুলবেন না। যে কোনও জাতীয় উদ্যানেই বর্ষাকালে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি থাকে না। বিশেষত কোর এলাকায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর তা বন্ধ রাখা হয়। তাই ওই সময়টা বাদে জাতীয় উদ্যান ভ্রমণের প্ল্যান করুন। জঙ্গল সাফারি, পাখি দেখা, অরণ্যকে ছুঁয়ে থাকা দরকার আপনার শিশুর জন্যেও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন