সমকালীন প্রতিবেদন : রাস্তা না বলে ডোবা বলাই হয়তো সঠিক। দিনের পর দিন সংস্কার না হওয়ার ফল। দীর্ঘ কয়েক দশকের অবহেলার পর অবশেষে প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটলেন গাইঘাটার ইছাপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের আঙ্গুলকাটা এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তার দাবিতে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। যশোর রোড সংলগ্ন গাইঘাটার ঠাকুরনগর–আঙ্গুলকাটা রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তারা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই অবরোধে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ওই রাস্তায় যান চলাচল। চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র ৮০০ মিটার দীর্ঘ এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি একবারও সংস্কার করা হয়নি। প্রতিবছর বর্ষাকালে রাস্তার অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, কাদা-জলে চলাফেরা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে বের হওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। রাস্তার পাশে প্রায় ৪০০ জনের বসবাস, যাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে এই রাস্তাটি। কৃষিকাজ, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাতায়াত, অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছানো—সব ক্ষেত্রেই সমস্যার শেষ নেই।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, তারা একাধিকবার পঞ্চায়েত সদস্য ও গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে শুধু আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে, বাস্তবে কোনও কাজ শুরু হয়নি।বিক্ষোভকারীরা এদিন স্লোগান তোলেন 'রাস্তা চাই, বাঁচতে চাই', 'এবার আর নয় প্রতিশ্রুতি, চাই পাকা রাস্তা'। পরে তারা সরাসরি স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের বাড়িতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন এবং দ্রুত রাস্তা সংস্কারের দাবিতে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।
এই বিষয়ে ইছাপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কার্তিক ঘোষ জানান, 'গ্রামবাসীদের দাবি একেবারেই যুক্তিসংগত। ইতিমধ্যেই বিষয়টি অ্যাকশন প্ল্যানের অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ করা যায়। প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে।'
এদিকে আন্দোলনকারীদের একাংশের বক্তব্য, এবার আর শুধু আশ্বাসে ভরসা রাখতে রাজি নন তারা। বাস্তবে কাজ শুরু না হলে আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা নারায়ণ মণ্ডলের কথায়, 'আমার ছোটবেলায় যেমন ছিল, আজও রাস্তা তেমনই আছে। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে গিয়ে কাদার মধ্যে পড়ে যায়। ইতিমধ্যেই আবার বর্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার যদি কিছু না হয়, আমরা চুপ করে থাকব না।'
সব মিলিয়ে, দীর্ঘ দিনের অবহেলিত একটি সমস্যাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবার সংগঠিত প্রতিবাদে রূপ নিল। এখন দেখার, প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হয় এবং সেই বহু প্রতীক্ষিত পাকা রাস্তাটি আদৌ গড়ে ওঠে কিনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন