সমকালীন প্রতিবেদন : অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় অভিভাবকরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাইঘাটা ব্লকের সেহানা সম্মিলনী আইসিডিএস সেন্টারে শুক্রবার সকাল থেকে সৃষ্টি হয় চরম উত্তেজনা। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে খাবারের গুণমান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কর্মীদের আচরণ—সবমিলিয়ে বিস্তর ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী।
স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সেহানা সম্মিলনী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের জন্য পরিবেশিত খাবার নিম্নমানের। রান্নার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। আরও অভিযোগ, পাশের একটি নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর স্থান থেকে মাটি তুলে তা হাঁড়ির নিচে ব্যবহৃত হয় রান্নার কাজে। এছাড়াও, রান্নার জন্য ব্যবহৃত সবজি কর্মীরা নিজেদের বাড়ি থেকে আনেন, যা অভিভাবকদের মতে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শুধু খাবার নয়, কর্মীদের ব্যবহার নিয়েও ক্ষোভের শেষ নেই। একাধিক অভিভাবকের বক্তব্য, বাচ্চারা কেন্দ্রে সঠিক সময়ে গেলেও দিদিমণিরা তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে দেন। এমনকি, কেন তারা স্কুলে এসেছে, এই প্রশ্ন করে অপমানিত করা হয়। এক অভিভাবক বলেন, “আমরা সন্তানের খোঁজ নিতে গেছি, কিন্তু উল্টে জবাব দিতে হয়েছে—আমাদের এখানে কেন আসা!”
বৃহস্পতিবার, কিছু অভিভাবক খিচুড়ি নিতে গেলে দেখেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বাইরে থেকে তালা লাগানো রয়েছে। এই ঘটনা ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। আজ, শুক্রবার সকালে কেন্দ্রে দুই কর্মী এলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিভাবকরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেন্টারের গেট তালাবদ্ধ করে দেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রে কোনও পরিষেবা চালু রাখা সম্ভব হয়নি।
বিক্ষোভকারী অভিভাবকরা সাফ জানিয়েছেন, ওই দুই কর্মীর অপসারণ না হলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাঁদের বক্তব্য, শিশুদের স্বাস্থ্যের সঙ্গে কোনওরকম আপস করা যাবে না এবং যাঁরা দায়িত্বে থেকে অবহেলা করেন, তাঁদের জবাবদিহি করতেই হবে।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত দুই কর্মী নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিছু ভুল বোঝাবুঝির জেরে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের আবেদন জানিয়েছেন।
এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এলাকাবাসীদের একাংশ মনে করছেন, দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে এত গুরুতর অভিযোগের পরেও প্রশাসনের নীরবতা হতাশাজনক বলে মনে করছেন তাঁরা।
একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, যার মূল উদ্দেশ্য শিশুদের পুষ্টি ও প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা—সেই জায়গায় যদি অনিয়ম ও অসচেতনতা চলে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে গোটা ব্যবস্থার উপরেই। সেহানা সম্মিলনী কেন্দ্রের এই ঘটনায় এখন নজর প্রশাসনের ভূমিকার দিকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন