সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলাদেশ থেকে পাট এবং পাটজাত দ্রব্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক। শুক্রবার এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য দপ্তরের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় ভাদু এই নির্দেশিকা জারি করেন। এতে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু ধরনের পাট ও তার উৎপন্ন দ্রব্য এখন থেকে ভারতের স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে আর আমদানি করা যাবে না।
নির্দেশিকায় মোট নয়টি পৃথক উপ-ধারায় নির্দিষ্ট করা হয়েছে কোন কোন ধরনের পাটজাত পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে হেসিয়ান কাপড়, পাটের দড়ি, স্যাক, জুট ফেব্রিক সহ বেশ কিছু রফতানিযোগ্য সামগ্রী। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে মহারাষ্ট্রের নবসেবা সমুদ্রবন্দরকে রাখা হয়েছে—এই বন্দর দিয়েই আপাতত বাংলাদেশি পাটজাত দ্রব্য ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।
বাণিজ্যে প্রভাব, আশঙ্কায় শিল্পমহল
এই নির্দেশিকা জারির পরই উদ্বেগ ছড়িয়েছে দুই দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী এবং কর্মীদের মধ্যে। ভারতের আমদানি বাণিজ্যে বাংলাদেশি পাটজাত দ্রব্যের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ থেকে যে সব পণ্য ভারতে আসে, তার একটি বড় অংশই পাটজাত দ্রব্য। নতুন নিষেধাজ্ঞায় যে পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই প্রধান আমদানিকৃত সামগ্রী।”
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনই প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গের বহু পাটকল ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে। বহু মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত, ফলে চাকরি ও রোজগারের ওপরও আঁচ পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ছায়া বাণিজ্যে
বাংলাদেশে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ক্রমাগত উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সেই উত্তেজনারই অন্যতম প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে এই আমদানি নিষেধাজ্ঞাকে। শুধু পাট নয়, ইতিপূর্বেও উভয় দেশ একাধিক পণ্যের আমদানি ও রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে সীমান্তবর্তী বাণিজ্য কার্যত ব্যাহত হচ্ছে।
উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখন স্পষ্টভাবেই একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে। বাণিজ্যিক মহলের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের উপর আরও বড়সড় আর্থিক ধাক্কা আসবে। যেহেতু এই অঞ্চলের একটি বড় অংশের মানুষের জীবিকা সীমান্ত বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল, তাই কেবল শিল্প নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা আর্থসামাজিক কাঠামো।
বর্তমানে ব্যবসায়ীদের মূল দাবি—দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা করে দ্রুত কোনও যৌথ সমাধানসূত্র খোঁজা হোক, যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে আবার সচল হয় নিয়মিত বাণিজ্যপ্রবাহ। নাহলে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত দুদেশের কয়েক লক্ষ মানুষের মধ্যে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন