Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

বাবার মৃত্যু টলাতে পারেনি বনগাঁর ক্রিকেটার রাজু হালদারকে

 

Cricketer-Raju-Halder

সমকালীন প্রতিবেদন : একজন বাবা‌–জীবনভর রিকশা চালিয়ে সন্তানকে বড় করেছেন। একজন ছেলে–ছোটবেলা থেকেই মুগ্ধ চোখে মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে দেখতেন ক্রিকেটারদের খেলা। জীবনের এক কঠিন মুহূর্তে সেই দুই মানুষের পথ যেন এক হয়ে গেল হৃদয়ের গভীরে। রাজু হালদার‌–বনগাঁর এক সাধারণ ছেলে, আজ যাঁর অসাধারণ মানসিক জোর বাংলার ক্রিকেট অনুরাগীদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। 

২৮ মে, বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। ঘরভর্তি শোক। অথচ শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আগেই ইডেন গার্ডেনসে নামেন রাজু। বাংলার প্রো টি-২০ লিগে সার্ভোটেক শিলিগুড়ি স্ট্রাইকার্সের হয়ে তিনটি উইকেট তুলে নেন অ্যাডামাস হাওড়া ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে।

শোকে মুহ্যমান হৃদয়, মুণ্ডিত মস্তক, তবু ডেলিভারিতে ভুল নেই। যেন বল হাতে একটাই মন্ত্র‌– 'বাবা, তোমার স্বপ্নকেই বাঁচিয়ে রাখব।' স্মৃতিচারণায় রাজু বলেন, 'বাবা বলত, কাজই ধর্ম। কখনও যেন নিজের কাজে সন্তুষ্ট না হয়ে যাই। সেই কথাই মাথায় ঘুরছিল। তাই মাঠে নামলাম।' 

রাজুর বাবা বিশ্বনাথ হালদার ছিলেন রিকশাচালক। পরবর্তীকালে ছেলের অনুরোধে রিকশা ছেড়ে ছোট ব্যবসা শুরু করেন। হাটে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। পড়ে গিয়ে গুরুতর চোট পান। পরে কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু।

সেই শোক ভুলে রাজুর ময়দানে ফিরে আসা যেন ক্রিকেটবিশ্বে সচিন বা বিরাটের মতো অধ্যায়ের নতুন বঙ্গ সংস্করণ। মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাবার মৃত্যুর পরে ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে শূন্যপানে তাকানো সচিনের শতরান কিংবা ১৮ বছরের বিরাট কোহলির কর্নাটকের বিরুদ্ধে ঘরোয়া ম্যাচে শতরান করে বাবাকে উৎসর্গ করার ঘটনা। 

কিন্তু রাজু একেবারেই অন্য প্রেক্ষাপটের যোদ্ধা। কলকাতার দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাবে প্রথমে জলের বোতল টানতেন, পরে একদিন হঠাৎ একাদশে সুযোগ… সেই সুযোগেই তিন উইকেট। তারপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। সকালে বনগাঁ লোকাল ধরে শিয়ালদা, তারপর ময়দান। ম্যাচ শেষে রাত ন’টায় বাড়ি ফেরা। সেই রুটিনেই এগিয়েছে জীবন। 

পেশায় রেলের কর্মী রাজু বলেন, 'ছোটবেলায় যখন মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে বল ধরতাম, কে জানত একদিন এই ইডেনে খেলব। বাবার সামর্থ্য ছিল না অ্যাকাডেমির মাইনে দেওয়ার। পরে কোচের অনুগ্রহে নিখরচায় প্রশিক্ষণ পাই। রাতে কাগজের থালা তৈরির কারখানায় কাজ করতাম। পয়সা জমিয়ে কিট কিনতাম। এভাবেই চলেছি।'‌

ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফরম্যান্স সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত বাংলা সিনিয়র দলে সুযোগ পাননি। সৈয়দ মুস্তাক আলিতে স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে সুযোগ মেলেনি। অথচ ইস্টার্ন রেলের হয়ে এক মরশুমে ৬৫ উইকেট এবং চলতি মরশুমে ৫৮ উইকেট তুলে নিয়েছেন। তবু স্বপ্ন দেখেন—একদিন বাংলার হয়ে খেলবেন। একদিন জাতীয় দলের জার্সিও গায়ে চড়াবেন। 

রাজুর কথায়, 'বাবা একবার বলেছিল, তোর খেলা টিভিতে দেখাবি, সেদিন দেখব। গত বছর টিভিতে দেখেছিল। এবার বলেছিল, মাঠে এসে দেখবে। তা আর হল না। কিন্তু আমি জানি, ওপর থেকে বাবা দেখছে। আর আমার প্রতিটা বল ওর আশীর্বাদেই যাচ্ছে উইকেট ছুঁতে।' ক্রিকেট ঈশ্বর কি শুনবেন রাজুর প্রার্থনা? এটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন