সমকালীন প্রতিবেদন : ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ও ঐতিহাসিক ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেট, ১৪৭ বছরের ইতিহাসে হয়তো সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে চলেছে। ২০২৭-২০২৯ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ঐতিহ্যবাহী পাঁচ দিনের বদলে চার দিনের টেস্ট চালু করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসি।
এমন সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত মিলেছে সদ্যসমাপ্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের সময়ে লর্ডসে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে। আইসিসি’র অভিমত, টেস্ট ম্যাচের দৈর্ঘ্য এক দিন কমিয়ে দিলে ছোট দেশগুলো টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিতে বেশি আগ্রহ দেখাবে। কারণ, পাঁচ দিনের ম্যাচ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিশাল সময়সীমা এবং অর্থনৈতিক চাপ। তার উপর রয়েছে আন্তর্জাতিক সূচির ঘনত্ব।
চার দিনের ম্যাচ চালু হলে তিন ম্যাচের সিরিজ মাত্র তিন সপ্তাহে শেষ করা সম্ভব। এতে বিমানভাড়া, আবাসন, নিরাপত্তা সহ অন্যান্য খরচ কমবে। এই ব্যবস্থায় বাংলাদেশ, জিম্বাবোয়ে, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের মতো বোর্ডগুলি নতুন করে টেস্ট আয়োজনের দিকে ঝুঁকতে পারে।
আইসিসি সূত্রের খবর, চার দিনের টেস্ট ম্যাচে প্রতি দিনে খেলা হবে ৯৮ ওভার, যেখানে বর্তমানে পাঁচ দিনের ম্যাচে দিনে ৯০ ওভার খেলা হয়। অর্থাৎ সময় কমলেও, মোট ওভারের সংখ্যা খুব বেশি কমবে না। ম্যাচের গতি বাড়াতে ও সময় নষ্ট রোখার জন্য আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির ভূমিকা আরও কড়া হবে।
সব টেস্ট ম্যাচ নয়, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সিরিজগুলোতেই চার দিনের ফরম্যাট প্রযোজ্য হবে। আইসিসি-র প্রস্তাব অনুযায়ী, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে আয়োজিত সিরিজ— যেমন অ্যাশেজ, বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি— আগের মতোই পাঁচ দিনের থাকবে। অর্থাৎ জনপ্রিয় সিরিজে রোমাঞ্চের চূড়ান্ত ধাপটি বজায় থাকবে।
টেস্ট ক্রিকেটে চার দিনের ম্যাচ নতুন কিছু নয়। ২০১৭ সালে আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে চার দিনের টেস্টকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড এবং ২০২৩ সালে আবারও ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড চার দিনের টেস্ট খেলেছে। এমনকি গত মাসেই ইংল্যান্ড জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে চার দিনের টেস্ট খেলেছে, যা এই ভাবনার বাস্তব প্রয়োগ বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
যদিও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ প্রবল। একদিকে ছোট দেশগুলির জন্য এটি সুবর্ণ সুযোগ, অন্যদিকে অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার ও অনুরাগী মনে করছেন এটি টেস্টের রোমাঞ্চ কমাবে। তবে বর্তমান সময়ে বোর্ডগুলির আর্থিক চাপ, সম্প্রচার সংস্থাগুলির সময়সীমা, এবং দর্শক আগ্রহের পরিবর্তন, সবমিলিয়ে নতুন বাস্তবতার দিকে এগোতেই হচ্ছে আইসিসি-কে।
বর্তমান ২০২৫-২০২৭ মরশুমে ২৭টি টেস্ট সিরিজ থাকবে এবং প্রত্যেকটিই হবে পাঁচ দিনের। বড় বদল শুরু হবে ২০২৭-২০২৯ মরশুমে। অর্থাৎ ক্রিকেট বোর্ডগুলির হাতে এখনো কিছু সময় আছে এই নতুন ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার। সাম্প্রতিক টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় টেস্ট ক্রিকেটে নতুন আলো জ্বালিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাভুমার দলের এই সাফল্য টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, বিশেষ করে আফ্রিকার মতো অঞ্চলে। আইসিসি আশাবাদী—এই পরিবর্তন ঐতিহ্যকে না ক্ষতিগ্রস্ত করে বরং নতুন দেশগুলিকে টেস্টের মূল স্রোতে নিয়ে আসবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন