সমকালীন প্রতিবেদন : প্রয়াত পোপের হৃৎপিণ্ড বের করে নেওয়া হয়! নষ্ট করে দেওয়া হয় আংটি। সাদা নাকি কালো রংয়ের ধোঁয়া, পরবর্তী পোপ নির্বাচনে বিরাট গোপনীয়তা। ফ্রান্স জুড়ে কি কি হয়? জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। সব কিছুতেই জড়িয়ে অদ্ভুত নিয়ম আর রহস্য। পোপের শেষকৃত্যের আচারবিধি থেকে সমাধিস্থ করা, সবটাই থাকছে আজকের এই প্রতিবেদনে।
দেহ সমাধিস্থ করার আগে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ থেকে হৃদপিণ্ড খুলে নিয়ে শ্বেতপাথরের কলসে সংরক্ষিত করে রাখা হয়। এই সব কিছু নতুন নয়, প্রাচীনকাল থেকে এই রীতিনীতিগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয় যুগের পর যুগ ধরে। এমনকি পোপের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনারও নানান বিধি রয়েছে। যেমন চিকিৎসকরা যখন জানিয়ে দেন যে, চিকিৎসা আর কাজে দিচ্ছে না। তিনি কোনও সাড়া দিচ্ছেন না। তাঁর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ, হৃদপিণ্ডের কাজ থমকে গিয়েছে।
তখন পরম্পরা অনুযায়ী পোপের মূল পরিচিতি আঙটি নষ্ট করে দেওয়া হয়। ভ্যাটিকানের এক সিনিয়র কর্তা প্রথম পোপের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তিনিই তিনবার পোপকে ডাকেন, তাতে সাড়া না দিলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর পর সাধারণত চার থেকে ৬, কখনও ৯ দিন পর সমাধিস্থ করা হয় পোপকে। আর মোট ৯ দিন শোকদিবস পালিত হয়। না এখানেই শেষ নয়, প্রথা মেনে এই কদিন পোপের পোশাক পরা দেহ শায়িত থাকে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায়।
তাঁর গায়ে সুগন্ধী মাখানো থাকে সারাক্ষণ। দেহ থেকে বেশ কিছু প্রত্যঙ্গ অপারেশন করে বের করে নেওয়া হয়। রোমের ত্রেভি ঝরনার কাছে থাকা এক গির্জায় এর আগের ২২ জন পোপের হৃদপিণ্ড শ্বেতপাথরের কলসাকৃতির পাত্রে সংরক্ষিত আছে। আসলে, এটাকে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র দেহাবশেষ বলে মনে করেন। ফলে এই গোটা প্রক্রিয়াটা অনেকের কাছে অদ্ভুত শোনালেও ফ্রান্সের মাটিতে ঘটে এমনই কান্ড।
এটা তো গেল পোপের শেষকৃত্যের পর্ব। এই শেষকৃত্যের প্রায় তিন সপ্তাহ পর অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে নতুন পোপ নির্বাচিত হন। কলেজ অফ কার্ডিনাল সিস্টিন চ্যাপেলে একটি কনক্লেভ ডাকে। এই কার্ডিনাল হল গির্জার সিনিয়র কর্তাদের একটি কমিটি। নির্বাচনের দিন সিস্টিন চ্যাপেলে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কার্ডিনালরা ভোট পর্যন্ত সেখান থেকে বেরতে পারেন না।
ভোটাভুটি শেষে সব ব্যালট একটা স্টোভের আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই গোটা প্রসেসটা যখন চলে, তখন সেখানে উপস্থিত থাকেন ভ্যাটিকানের দমকল কর্মীরাও। এরপর আরও একটা স্টোভ জ্বালানো হয়। যা থেকে কেমিক্যালসের মাধ্যমে গির্জার বাইরে চিমনি থেকে ধোঁয়া বের করা হয়। আর উপস্থিত দর্শকরা ধোঁয়ার রং দেখে খুব সহজেই বুঝতে পারেন পোপ নির্বাচন হয়েছে কিনা। কালো ধোঁয়ার মানে নির্বাচন সম্পূর্ণ হয়নি। আর সাদা ধোঁয়ার মানে পোপ নির্বাচন হয়ে গিয়েছে।
যে পোপ নির্বাচনের পর একজন উচ্চপদস্থ কার্ডিনাল বারান্দায় এসে জানান, তাদের একজন পোপ আছেন। তারপরই নতুন পোপ তার নতুন নাম নিয়ে জনতার সামনে আসেন, হাজির হন। এখন প্রশ্ন হল, ফ্রান্সিসের পর কে হতে পারেন নতুন পোপ? নামের তালিকা অনেক লম্বা। আর ঠিক সেই কারণেই ক্যাথলিক সমাজে এই নিয়ে আপাতত জল্পনা তুঙ্গে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন