Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন কেমন হয়?

 ‌

Naga-monk

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌নাগা সন্ন্যাসীদের গায়ে একটা সুতোও থাকে না। জানেন, কোন কঠিন তপস্যায় হওয়া যায় নাগা সন্ন্যাসী? কী খেয়ে বেঁচে থাকেন? যে নাগা সন্ন্যাসীদের রহস্যময় জীবন ঘিরে সাধারণ মানুষের বিরাট আগ্রহ, সারাটা বছর তাঁরা থাকেন কোথায়? আসেন মহাকুম্ভে। মাথায় ধারণ করেন জটা! কেন পরেন না পোশাক? সকাল থেকে রাত, কি কি ঘটে নাগা সন্ন্যাসীদের জীবনে? জানুন আজকের প্রতিবেদনে।

সাঙ্ঘাতিক কঠিন জীবনযাপন করেন নাগা সন্ন্যাসীরা। হ্যাঁ। সকলে নাগা সন্ন্যাসী হতে পারেন না। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাওয়ার পর সেই সুযোগ থাকে না। যারা নাগা সন্ন্যাসী হন, তাদের ছোটবেলাতেই সন্ন্যাস নিতে হয়। তপস্যা, ধ্যান, কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে তারা নাগা সন্ন্যাসী হন। নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার যাত্রা শুরু হয় ব্রহ্মচর্য থেকে। প্রথম স্তরই হয় অত্যন্ত কঠিন, যা সকলে পালন করতে পারেন না। শৈশবেই আখড়ায় যোগ দিতে হয়। এরপর অনেক পরীক্ষা, যেখানে তাদের মনের জোর, দৃঢ় প্রতীজ্ঞা ও একাত্ববোধ যাচাই করা হয়। 

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ১২ বছর ব্রহ্মচর্যের জীবন কাটান তারা। এর পরের ধাপে আসে পঞ্চ গুরু ও পিণ্ডদান। আমরা জানি, সাধারণত মৃত্যুর পরই পিণ্ডদান করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে শিব, বিষ্ণু, শক্তি, সূর্য ও গণেশ– এই পাঁচ দেবতার আরাধনার পর সাধুরা নিজেদের পিণ্ডদান করেন। সন্ন্যাসজীবনও যেহেতু নতুন একটি জীবন, তাই সন্ন্যাসী হওয়ার আগে তাদের পূর্ববর্তী জীবন সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করতে হয়। সামাজিক, পারিবারিক বন্ধন ত্যাগ করে পিণ্ডদানের মাধ্যমে নবজন্ম হয় তাদের।

শেষ ধাপে লিঙ্গ নিষ্ক্রিয় করা হয়। ওই সময়ে সন্ন্যাসীদের ২৪ ঘণ্টা উপবাস করতে হয়। গোটা একটা দিন তারা আখড়ার পতাকার নীচে দাঁড়িয়ে থাকেন। এক চুলও নড়েন না। এই রীতির মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধতা হয়। এই ধাপ উত্তীর্ণ হওয়ার পরই একজন মানুষ নাগা সন্ন্যাসী হতে পারেন। যারা সাত্ত্বিক খাবার খান। ভাত, রুটি, দুধ, দই, শাকসবজি, আলু এবং মিষ্টিই প্রধান খাদ্য। তবে দিনে মাত্র একবারই খাবার খান তারা। নাগা সন্ন্যাসীরা নিজে উপার্জন করেন না। ভিক্ষার উপরই জীবন নির্বাহ করেন। তবে সেক্ষেত্রেও নিয়ম রয়েছে। নাগা সন্ন্যাসীরা সাতটার বেশি বাড়ি থেকে ভিক্ষা চাইতে পারেন না।  মূলত, লোভ সংবরণের জন্যই এই নিয়ম।

স্বাভাবিক মানুষের থেকে একেবারেই আলাদা জীবন কাটান নাগা সন্ন্যাসীরা। সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন। ভোর ৩টে থেকে সাড়ে ৩টের মধ্যে উঠে তারা প্রথমে স্নান করেন। তারপর ধ্যানে বসেন। দেবতার নাম জপ করার পর যজ্ঞ শুরু করেন। নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পড়েন। আশ্রম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও তাদেরই। নাগা সন্ন্যাসীদের জীবনে রজোগুণ, তমোগুণের কোনও স্থান নেই। বহু মানুষই নাগা সন্ন্যাসীদের ভয় পান। তবে তাদের দাবি, তারা খুবই শান্ত। মন কোমল। 

নাগা সন্ন্যাসীদের অন্যতম পরিচয়ই হল তারা পরেন না কোনো পোশাক আশাক। শরীর থেকে মন শুদ্ধ রাখতে এবং মোহ-মায়া ত্যাগেরই একটি অংশ পোশাক পরিত্যাগ করা। অথচ তাদের ঠাণ্ডাও অনুভূত হয় না। নাগা সন্ন্যাসীদের ঠান্ডা না লাগার অন্যতম কারণ, তারা বিভূতি লাগান। মৃতদেহের ছাই বা বিভূতি, যা মন্ত্রপূত, তা নাগা সন্ন্যাসীদের শীত থেকে সুরক্ষা দেয়। তাছাড়া, নাগা সন্ন্যাসীরা সংযমের জীবনযাপন করেন। তাই শরীরে শক্তি স্থির থাকে। শরীর ভিতর থেকে উষ্ণ হয়, যা প্রবল ঠান্ডাতেও সুরক্ষা দেয়।

জটাও নাগা সন্ন্যাসীদের অন্যতম পরিচিতি। নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার পর তাদের কাছে দুটো পথ থাকে, হয় তারা চুল কাটতে পারবেন না, জটা রাখতে হবে। নয়তো সম্পূর্ণ চুল কামিয়ে ফেলতে হবে। নাগা সন্ন্যাসীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকে তারা জটা রাখবেন না কি ন্যাড়া হয়ে যাবেন।

কুম্ভমেলায় এই নাগা সন্ন্যাসীরাই আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। হ্যাঁ, কুম্ভ মেলা উপলক্ষে প্রয়াগরাজে এসেছেন নাগা সন্ন্যাসীরা। কিন্তু মেলা শেষ হলে তারা তীর্থে বেরিয়ে পড়েন। মূলত শীতল স্থানে থাকেন। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো পাহাড়ি নির্জন এলাকায়। পাহাড়ি গুহায় বাস করেন। সারা বছর সেখানে ধ্যান করেন।

আসলে, এই নাগা শব্দটাও এসেছে সংস্কৃত থেকে, যার অর্থ সেই পাহাড়। অর্থাৎ যারা পাহাড়ে থাকতেন, তাদেরই পাহাড়ি বা নাগা বলা হতো। যে নাগা সন্ন্যাসীদের জীবনের অধিকাংশ সময় কাটে পাহাড়েই। তবে বলাইবাহুল্য, সাধারণ সাধুদের থেকে নাগা সন্ন্যাসীরা অনেকটাই আলাদা।‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন