সমকালীন প্রতিবেদন : প্রত্যেক বুদ্ধিদীপ্ত শিশুর বুদ্ধিমত্তার নেপথ্যে বাবা ও মায়ের মধ্যে কার জিন বেশি সক্রিয়, এই বিষয়ে বিতর্কের শেষ নেই। অনেকের মতে মায়ের, আবার অনেকের মতে বাবার। তবে আসল সত্যিটা কী? কার জিন বেশি প্রভাব ফেলে জানেন?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সন্তানের বুদ্ধিদীপ্ততার নেপথ্যে মায়ের জিন বেশি সক্রিয়। সেখানে বাবার জিনের কোনো ভূমিকা নেই। দীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বিতর্কের পর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মায়ের জিন থেকেই শিশুর মধ্যে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে। কারণ, ডিম্বাণুতে এক্স ক্রোমোজোম একজোড়া থাকলেও শুক্রাণুতে মাত্র একটি এক্স ক্রোমোজোম থাকে।
আর এই এক্স ক্রোমোজোমই বুদ্ধিদীপ্ত জিন বহন করে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞান সম্পর্কিত উন্নত আচরণ যুক্ত জিন নিজে থেকেই অকেজো হয়ে যায়। আর এই কারণেই শিশুর মধ্যে বুদ্ধির বিকাশ ঘটার পিছনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে মায়ের জিন।
প্রত্যক্ষ প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানীরা ১৪ থেকে ২২ বছর বয়সী ১২,৬৮৬ জন তরুণের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, সন্তানের বুদ্ধির দৌড় সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে মায়ের আইকিউর উপর। তবে শুধুমাত্র জিনতত্ত্বই মানুষের বুদ্ধিমত্তার একমাত্র নির্ধারক নয়।
বুদ্ধিমত্তার ৪০-৬০ শতাংশ বংশানুক্রমে এলেও বাকিটুকু আসে পরিবেশ থেকে। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে দেখেছেন, ইঁদুরের মস্তিষ্কের ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন অংশে বাবা ও মায়ের জিন কার্যকর হয়। বাবার জিন দেহের লিম্বিক সিস্টেমে কাজ করে, যা সেক্স, খাবার ও আগ্রাসী মানসিকতা তৈরিতে কাজ করে।
তবে বিজ্ঞানীরা সেলেব্রাল কর্টেক্সে বাবার কোনো জিন খুঁজে পাননি। এই অংশে কগনিটিভ ফাংশনের অধিকাংশটুকু কাজ করে, যা দর্শন, চিন্তাশক্তি, ভাষা এবং পরিকল্পনা তৈরির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 'আন্ডারস্ট্যান্ডিং মাদারস জেনেটিকস' নামক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মায়ের সঙ্গ, ছোঁয়া, আবেগও শিশুর আইকিউকে উন্নত করে!
মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০ জন শিশুর ওপর একটি পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যায়, যে সকল সন্তান মায়ের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ বা মায়ের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়, তারা মাত্র দু'বছর বয়সে নিজের বয়সের তুলনায় কঠিন সমস্যার সমাধান করতে পারে।
এমনকি জটিল কোনও খেলা যেমন 'পাজল'-এর সমাধান খুব সহজেই তারা করে ফেলে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শিশুর মস্তিষ্ককে যেমন উন্নত করে, পাশাপাশি মায়ের ঘনিষ্ঠ শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় কম ভোগে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন