সমকালীন প্রতিবেদন : হিন্দুধর্ম্বাবলম্বী মানুষের কাছে এটি অন্যতম একটি তীর্থস্থান। এমনকি চারধামের মধ্যেও পরে এই কেদারনাথ ধাম। এখানেই শেষ নয়, দেবাদিদেব মহাদেবের ১২ টি জ্যোর্তিলিঙ্গের মধ্যে একটি রয়েছে এখানে। গতবছর ভাইফোঁটার দিন বন্ধ হওয়ার ৬ মাস পর গত ১০ মে অক্ষয় তৃতীয়ার বিশেষ দিনে খোলা হয় কেদারনাথের দরজা।
এই কেদারনাথ মন্দির তৈরির ইতিহাস কিন্তু বেশ মজাদার। তখন টানা ১৮ দিনের যুদ্ধের পর জ্ঞাতি ভাইদের হত্যা করায় সেই পাপবোধ পান্ডবদের মনে নানা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছিল। এইসময় পরামর্শ নিতে গেলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের জানান, তাঁরা এই যুদ্ধে প্রচুর পরিমাণে ব্রাহ্মণদের হত্যা করায়, তাঁদের উপর ব্রাহ্মণ হত্যার পাপও লেগেছে। তাই স্বর্গে গিয়ে তাঁদের প্রথমে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণের কথামতো পঞ্চপান্ডব এবং দ্রৌপদী মহাদেবের দর্শনের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেন। প্রথমে তাঁরা হিমালয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেখানে বরফের মধ্যে বেঁচে থাকা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এরপর তাঁরা গুপ্তকাশীতে পৌঁছান, যেখানে মহাদেব এবং পার্বতী আরাম করছিলেন।
এদিকে আবার পান্ডবদের দর্শন দিতে রাজী ছিলেন না মহাদেব। তখন পান্ডবদের করুণ অবস্থা দেখে মাতা পার্বতী পান্ডবদেরকে পরামর্শ দিলেন, কোন পথে গেলে তাঁরা মহাদেবের দর্শন পাবেন। মাতা পার্বতীর কথামতো পথে চলতে গিয়ে তাঁরা রাস্তায় একদল ষাঁড় দেখতে পান।
এই ষাঁড়ের দল দেখে যুধিষ্টিরের মনে পড়ে যায় একবার ভস্মাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে মহাদেব এই ষাঁড়ের রূপ ধরেছিলেন। তিনি আন্দাজ করেন এই ষাঁড়ের দলের মধ্যেই মহাদেব রয়েছেন। তখনই তিনি ভীমকে এই ষাঁড়ের দলের থেকে এক একটি করে ষাঁড় আলাদা করতে বলেন।
দাদার কথামতো ভীম এমন কৌশল করেন, যাতে করে জায়গা পরিবর্তন করার জন্য ভীমের পায়ের নীচে দিয়ে যেতে হবে সব ষাঁড়গুলোকে। এই সময় সব ষাঁড় ভীমের পায়ের নীচে দিয়ে গেলেও, একটি ষাঁড় গোটা বিষয়টা এড়িয়ে মাটির নীচে ঢুকে যেতে থাকে।
আর এই দৃশ্য দেখে ভীম দৌড়ে গিয়ে ওই ষাঁড়ের পিঠের কুজ চেপে ধরে। গায়ে ১০ হাজার হাতির বল থাকা সত্ত্বেও ভীম সেইসময় ওই ষাঁড়ের পিঠের কুজটুকুই শুধু ধরতে পেরেছিল। এই সময় পান্ডবদের আস্থা দেখে ভগবান শিব তাঁদের দর্শন দেন এবং তাঁদের পাপমুক্ত করেন।
কেদারনাথে যেহেতু মহাদেবের পিঠের কুজটুকুই মাটির উপরে ছিল, সেই কারণে কেদারনাথ মন্দিরে গেলে দেখবেন, সেখানে ওই কুজটাই মহাদেব রূপে পুজো করা হয়। আর এই সময় মহাদেবের শরীরের বাকি অংশ যেখানে যেখানে বেরিয়েছিল, এই জায়গাগুলোকে একসঙ্গে পঞ্চকেদার বলা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন