সমকালীন প্রতিবেদন : অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের অবস্থা যেন দিনকে দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের ক্ষমতা যে কতখানি তা দেখিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ। দিন রাত এক করে তাঁরা পড়ে রয়েছেন রাস্তায়। করে চলেছে প্রতিবাদ। ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১০৫ জন। যেটি সরকারী হিসাবে ৪৩ জন বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবীতে রাস্তায় নেমেছে ছাত্রসমাজ। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের জন্য নির্ধারণ করা আসন চাইছে না বাংলাদেশের আমশিক্ষার্থীরা। এদিকে, বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকার সেই আসন সংরক্ষণের নিয়মে কোন পরিবর্তন করতে নারাজ। এই নিয়েই দুপক্ষের মধ্যে তৈরি হওয়া সংঘর্ষের জেরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ।
শুক্রবার ছুটির দিনে সেই পরিস্থিতি যেন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ঝড়তে থাকে একের পর এক তাজা প্রাণ, বিভিন্ন জায়গায় জ্বলে ওঠে আগুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পথঘাট দেখলে মনে হবে যেন রণক্ষেত্র।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে গোটা দেশে কারফিউ জারী করেছে হাসিনা সরকার। সেইসঙ্গে রাস্তায় নামানো হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রথমে পুলিশের লাঠি চার্জের পর এবার কারফিউ জারী করেছে বাংলাদেশ সরকার।
এই বিষয়ে শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার ফারুক হোসেন ঘোষণা করেন, শুক্রবার দুপুর থেকেই পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সভা সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রাজধানী ঢাকাতে।
বিগত কয়েকদিন ধরে হয়ে চলা বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতি নিয়ে এবার মন্তব্য করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান ভলকার টার্ক বলেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্রদের উপর হওয়া এই হামলার ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ধরনের হামলা বিস্ময়কর। যারাই আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর হামলা করেছে, তাঁদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।'
পাশাপাশি, বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে হাসিনা সরকারকে বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বাংলাদেশের সরকার সেনা নামানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, তাঁরা যেন দেশের ছাত্রদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে দেওয়া হোক ছাত্রসমাজকে এবং কোনওরকম হামলার আশঙ্কা ছাড়াই স্বাধীনতার অধিকার যাতে সুরক্ষিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।'
এদিকে, বাংলাদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়া দেশ বিদেশের বহু পড়ুয়া সীমান্ত পার করে প্রাণ হাতে নিয়ে নিজের নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ৪০০ জন ভারতীয় পড়ুয়া দেশে দিরে এসেছেন। সেইসঙ্গে নেপাল, ভুটানের বহু পড়ুয়া ভারতের পথ দিয়ে নিজের নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের এই উত্তাল পরিস্থিতিতে তাঁরা কোনওমতে নিজেদের প্রাণ হাতে করে নিয়ে ফিরেছেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির প্রভাব পড়ল সীমান্ত-বাণিজ্যেও। দু একদিন আগে থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল যে, যেকোনও মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। শনিবার সকালে সেটাই সত্যি হলো।
এদিন সকালে হাতেগোনা কিছু ট্রাক পণ্য নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করলেও তার পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় সীমান্তের গেট। ফের কবে বাণিজ্য চালু হবে, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তায় পড়েছেন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। এই সীমান্ত দিয়ে এই মুহূর্তে যাত্রী যাতায়াতের সংখ্যাও তুলনায় অনেকটাই কম রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন