Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪

মৌনী তাপস বৈশাখ

 ‌

First-Baisakh

মৌনী তাপস বৈশাখ 

পীযূষ হালদার


সাধক রবীন্দ্রনাথ! প্রকৃতিকে তিনি অনুভব করেছেন ঋষির অনুভবে। বৈশাখের পুরোটাই তাঁর অনুভবে এক উজ্জ্বল, শুদ্ধ এক তাপস। ঋষিদের ভারত, তপোবনের প্রশস্তি, বৈশাখের স্বচ্ছ ভোর, ছোট নদীর জলতরঙ্গ, অরণ্য জীবনের সুগন্ধি সভ্যতার সওদাগরেরা কেড়ে নিয়েছে। তবু আসবে বৈশাখ। মনের মধ্যে চলে আসবে প্রাচীন কোনও দোকানের আমপাতার মালা, আসল শোলার ফুল, খেরোর খাতার লাল মলাটে স্বস্তিক চিহ্ন। 

আবার একটা পয়লা বৈশাখ এসে গেল। ১৪৩১ সনের বাংলার নববর্ষ। বাঙালির বিরাট উৎসব। এক বাঙালিয়ানার উৎসব। প্রখর তাপে এই সময় জমিয়ে উদযাপন করাটা এক বিড়ম্বনা। তবুও কিছু মানুষ প্রচন্ডরকমভাবে বাঙালি সাজার চেষ্টা করবে। ভালোলাগার বা চোখে ধরার সে চেষ্টাতেও থাকবে কৃত্রিমতার ছাপ। বাঙালিয়ানাকে জাহির করার জোর প্রচেষ্টা। এটাই তো বাঙালির গর্ব। 

আছে কিছু উপাচারিক লক্ষণ। রাতারাতি পায়জামা আর পাঞ্জাবি পরিহিত বাঙালি পুরুষ মোটর বাইকে ছোটাছুটি করবে রাস্তায়। কোথাও কোথাও চন্দন রঙা গরদের লাল পেড়ে শাড়ি পরিহিত মহিলারাও বসে থাকবেন তাদের পিছনে। কোথাও বাংলা গান, কবিতা আবৃত্তির আসর জমে উঠবে। 

নববর্ষের দিনের পুরনো দৃশ্য বিরল হলেও, মফ:‌স্বল শহর এবং গ্রামগুলোতে এখনও দোকানের দুদিকে কলা গাছের মাঙ্গলিক উপস্থিতি, রঙিন মালা, কাগজের শিকল দেখা যায়। হাতে হাতে লস্যি বা ঠান্ডা পানিয়ের বোতল উঠে আসে। সারা বছরের চেনা দোকানির গোমড়া মুখেও বিগলিত আপ্যায়নের হাসি ফুটে থাকে। 

হাতের লাল বাঁধানো খেরোর খাতা ধীরে ধীরে ভরে উঠতে থাকে আগাম জমার হিসাবে। হয়তো এখন আর এ দোকান সে দোকান ঘুরে ঘুরে বাঙালিবাবু বা গিন্নির মিষ্টির প্যাকেটে হাতের ব্যাগে আর উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় না। হাতে হাতে নতুন বছরের লক্ষ্মী, গণেশ অথবা মা কালীর ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডার খুব কমই দেখা যায়। 

একসময়ের এই আপ্যায়ন আতিথেয়তার চিত্র একবিংশ শতকে পৌঁছে অনেকটা বদলেছে। অনলাইনে কেনাবেচার হিড়িক আর বিশ্বায়নের ছোঁয়া নববর্ষ পালনের ধারা খানিক পাল্টে দিয়েছে। তবু আজও বাংলার বনেদি বা সাবেকি দোকানগুলো নববর্ষ পালনের সেই পুরনো ধারা বজায় রেখেছে। 

পাড়ার দোকানগুলোতে হালখাতার আয়োজন ছেলেবেলা থেকে দেখে এসেছি। এবারও হবে। তবে এখন রাস্তার উল্টোদিকের জম্পেস করে কাচের আড়ালে সাজিয়ে রাখা ম্যানেকুইনগুলো শপিংমলের জেল্লা আমবাঙালির মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। সারা বছর ধরে এখানে বেহালখাতার আয়োজন চলতেই থাকে। 

কখনও শতকরা হিসাবের প্রস্তব আবার কখনও একটার সাথে আর একটা মাগনা মেলার। পয়লা বৈশাখ আসে বাঙালিয়ানার সাজে। বিক্রেতাদের পরিপাটি একদিনের বাঙালি সাজের মধ্যে কীরকম একটা শুকনো ঠাট্টা লুকিয়ে থাকে। বাঙালি সাজের এই যে প্রয়াস এটাই এখন দুর্দম ফ্যাশন। 


এতকিছুর পরেও বাঙালির উৎসব বাঙালির বাঙালিত্ব হারিয়ে যায় না। আজকে যদি এখানে পয়লা বৈশাখের আনন্দ উৎসব হয়, তাহলে তা রাষ্ট্রের বাঙ্গালীদেরমধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা। সীমানা ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে বিদেশেও। 

তাই পরিশেষে বলি, বাঙালির আপন কৃষ্টি–সংস্কৃতির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মঙ্গলদীপের সলতে পাকানো আমরা যেন বন্ধ না করি। মৌনি তাপস বৈশাখ বছরের বাকি দিনগুলো আমাদের আঙ্গিনা ভরে রাখুক মঙ্গলময় জীবনে।




             

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন