সমকালীন প্রতিবেদন : পৃথিবীর বাইরে জীবনের অস্তিত্ব নিয়ে যখন এত রহস্য, তখন আমরা হয়তো ভুলে যাচ্ছি যে আমাদের পৃথিবীতেই রয়েছে এমন এক প্রাণী, যারা একপ্রকার অমর। মনে করা হয়, যত দিন না সূর্য মরছে, তত দিন বেঁচে থাকবে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী। এই অবিনশ্বর প্রাণীটির নাম ‘টারডিগ্রেড’।
এক মিলিমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের আটপেয়ে প্রাণীগুলিকে ‘ওয়াটার বেয়ার’ বা ‘জলভালুক’ নামেও ডাকা হয়। কেউ কেউ আবার এগুলিকে বলেন ‘শেওলা শূকরছানা’। তবে আকার-আয়তনে এই প্রাণী আণুবীক্ষণিক হলেও মহাবিশ্বের যেকোনও চরমতম পরিস্থিতিতেও তারা বেঁচে থাকতে পারে। কারণ, জলে বসবাসকারী এই প্রাণীরা খাবার এবং জল ছাড়া ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সুপারনোভা এবং গামা রশ্মির বিস্ফোরণের মতো যে সব মহাজাগতিক বিপর্যয়ে মানবজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে, সে সব পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকতে পারে টারডিগ্রেডরা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই প্রাণীরা কমপক্ষে ১০০০ কোটি বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। অর্থাৎ, সূর্য যতক্ষণ জ্বলতে থাকবে, ততক্ষণ পৃথিবীতে তারা বেঁচে থাকতে পারে।
এবার এই প্রাণীটিকে পরীক্ষা করার জন্য বিশেষ চিন্তাভাবনা শুরু করেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। জলভালুক কতটা চরম পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে পারে, তা বোঝার জন্য সেই প্রাণীকে চাঁদেও পাঠানো হয়েছিল। ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চাঁদের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ইজ়রায়েলের মহাকাশযান ‘বেরেশিট’।
সেই মহাকাশযানের ভেতরে ঘুম পাড়িয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাদের। সেই যানে চড়েই চাঁদে নামার কথা ছিল জলভালুকের। কিন্তু ১১ এপ্রিল যান্ত্রিক গোলযোগে চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়ে ‘বেরেশিট।
আর এখানেই তৈরি হচ্ছে সম্ভাবনা। হয়তো সেই ধ্বংস থেকে বেঁচে চাঁদের বুকে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণীটি। হয়তো চাঁদকে নিয়ে গবেষনার ক্ষেত্রে মানুষকে পরবর্তীকালে দিশা দেখাবে এই রহস্যময় জলভালুক।
এদিকে, ভারতের পাঠানো চন্দ্রযানের ঘুম ভেঙে আসার সময় প্রায় আসন্ন। তাই চন্দ্রযান-৩ যদি আবার জেগে ওঠে, তাহলে হয়তো জীবন্ত এই অবিনশ্বর প্রাণীদের দেখা পেলেও পেতে পারে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান।
আর তেমনটা হলে হয়তো ভারত এবং ইজরায়েলের যৌথ উদ্যোগে চাঁদের বুকে লেখা হবে এক অন্য ইতিহাসের গল্প, যা অবাক করতে পারে আমেরিকা এবং রাশিয়াকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন