Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

অকাল প্রয়াত যুবকের একাধিক অঙ্গ অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন, মৃত্যুর পরেও '‌বেঁচে' রইলেন যুবক

Transplantation-of-multiple-organs-into-another-body

সমকালীন প্রতিবেদন : একটা অকাল মৃত্যু বাঁচিয়ে দিল একাধিক প্রাণ। জাগতিক মৃত্যু হলেও জগদীশ বেঁচে থাকবেন অন্যের শরীরে। কারণ, তাঁর শরীরের একাধিক সক্রিয় অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হল একাধিক অসুস্থ মানুষের শরীরে। এমনকি তাঁর দুটি অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হল একজন ব্যক্তির শরীরে, যা পূর্ব ভারতে বিরততম ঘটনা।

উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার ফিফা গ্রামের বাসিন্দা বছর ৪৮ বয়সের জগদীশ মন্ডল কর্মসূত্রে কলকাতার কালীঘাট এলাকায় থাকতেন। সেখানে একটি বেসরকারি পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করতেন। বাড়িতে স্ত্রী এবং দুই ছেলে–মেয়ে রয়েছেন।

প্রতিদিনের মতো গত সোমবার দুপুর সাড়ে ৩ টে নাগাদ খাবার খাওয়ার জন্য পায়ে হেঁটেই কালীঘাট বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় আচমকাই দুরন্ত গতির একটি মোটর বাইক জগদীশকে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা মারে। জগদীশ রাস্তার উপরে ছিটকে পড়েন। বাইক চালকও পড়ে যায়।

ওই অবস্থায় বাইক চালক যুবক মোটর বাইকটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে ফের ধাক্কা মারে জগদীশকে। পর পর দুবার এইভাবে ধাক্কা খাওয়ার ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখম হন জগদীশ। মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে তাঁর আঘাত লাগে। স্থানীয়রাই তাঁকে মারাত্মক জখম অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করেন।

সেখানে তাঁকে রেড জোনে রাখা হয়। শারীরিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে মঙ্গলবার সন্ধেয় তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। এইভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন জগদীশ। যদিও শেষপর্যন্ত চিকিৎসকদের সমস্তরকম চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায়।

বুধবার বিকেলে চিকিৎসকেরা পরিবারের লোকেদের জানিয়ে দেন, জগদীশের ব্রেন ডেথ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় কোনওভাবেই তাঁকে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁর শরীরের বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।

এমন একটি পরিস্থিতিতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জগদীশের পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে, যেহেতু জগদীশের শুধুমাত্র ব্রেন ডেথ হয়েছে, বাকি সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালো আছে, তাই তাঁরা চাইলে এই অঙ্গগুলি অন্য মুমূর্ষু রোগীদের জন্য দান করতে পারেন।

জগদীশের নিকট আত্মীয়রা তাঁর স্ত্রীকে এই সম্পর্কে বোঝানোর পর অবশেষে তিনি রাজী হন। সেই অনুযায়ী শুক্রবার ভোর থেকে জগদীশের শরীরের সক্রিয় অঙ্গগুলি অস্ত্রপচারের মাধ্যমে অন্য রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়। 

এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জগদীশের একটি কিডনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসারত ৩২ বছরের এক যুবকের শরীরে, দ্বিতীয় কিডনি এবং লিভার ওই হাসপাতালেই চিকিৎসারত ৩৪ বছরের আর এক যুবকের শরীরে, হার্ট কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে চিকিৎসারত ৪০ বছর বয়সের এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। 

এছাড়া, জগদীশের কর্ণিয়া এবং স্কিন এসএসকেএম হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, এদিন জগদীশের একটি কিডনি এবং একটি লিভার ওই হাসপাতালেই চিকিৎসারত এক ৩৪ বছরের যুবকের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যে ঘটনা পূর্ব ভারতে এই প্রথম। 

জগদীশের বড় দাদা দেবাশীষ মন্ডল জানান, একদম ছোটবেলাতেই তাঁরা তাঁদের মাকে হারিয়েছেন। জগদীশের বয়স যখন ১৪ বছর, তখন বাবা একটি বাস দূর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। একটি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বাবাকেও হারান তাঁরা। 

ভাইয়ের এই অকাল প্রয়াণে বুক ফাঁটা কান্না বুকে চেপে রেখে তাঁর একটাই শান্তনা, ভাইয়ের জাগতিক মৃত্যু ঘটলেও ভাই আরও বেশ কয়েক বছর 'বেঁচে' থাকবে অন্যের শরীরে। ভাইয়ের চোখ দিয়ে এই জগৎ দেখবেন অন্য কেউ। নিজে মৃত্যুকে বরণ করেও জগদীশ বাঁচিয়ে রেখে গেলেন আরও‌ কয়েকজনকে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন