Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩

বাগদায় জেলা পরিষদের ১ নম্বর আসনে ফলাফল বদলে দেওয়ার অভিযোগ, বিচার পেতে হাইকোর্টের ‌দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি

 

The-result-changed-instantly

সমকালীন প্রতিবেদন : জয়ী প্রার্থী হিসেবে উইনার্স ফর্ম নেওয়ার জন্য ৭ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হল বিজেপি প্রার্থীকে। ‌রাত পেরিয়ে সকাল হতেই সেই কেন্দ্রের জয়ী প্রার্থী হিসেবে নাম উঠে এলো তৃণমূল প্রার্থীর। আর সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জয়ী প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল প্রার্থীকে সার্টিফিকেটও দিয়ে দেওয়া হল। চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগ উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লক এবং বনগাঁ মহকুমা প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের ১ নম্বর আসনটি বাগদা ব্লকের কনিয়াড়া ২ নম্বর, সিন্দ্রানী এবং মালিপোতা– এই ৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে অবস্থিত। এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন শম্পা অধিকারী। আর বিজেপি প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন দিপালী বিশ্বাস। এছাড়া আরও দুজন প্রার্থী ছিলেন।

বাগদা ব্লকের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সমস্ত ভোট গণনা হয় হেলেঞ্চা হাইস্কুলে। এই গণনা কেন্দ্রের ৪ টি ঘরে জেলা পরিষদের ১ নম্বর আসনের ভোট গণনা চলে। ভোর সাড়ে ৩ টে নাগাদ গণনার কাজ শেষ হয়। বিজেপি প্রার্থী দিপালী বিশ্বাসের বক্তব্য, গণনা শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, তিনি তাঁর নিকটতম তৃণমূল প্রার্থী শম্পা অধিকারীর থেকে ৫৩৪৪ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন অর্থাৎ তিনি জয়ী হয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী, জেলা পরিষদ স্তরে গণনার শেষে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জয়ী প্রার্থীকে ২২ নম্বর ফর্ম দেওয়া হয়। সেই ফর্ম নিয়ে মহকুমা প্রসাসনের দপ্তরে গেলে ২৩ নম্বর ফর্মে সেই প্রার্থীকে সরকারিভাবে জয়ী ঘোষণা করে ২৪ নম্বর ফর্ম পূরণের মাধ্যমে জয়ী প্রার্থীর হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়। 

বিজেপি প্রার্থী দিপালী বিশ্বাসের অভিযোগ, ভোট গণনার পর ২২ নম্বর ফর্ম দেওয়ার কথা বলা হলে বাগদার বিডিও তাঁকে বলেন, ভোটকর্মীরা ব্যস্ত রয়েছেন। তাই অপেক্ষা করতে হবে। ২২ নম্বর ফর্ম তাকে ইস্যু করেই ছাড়া হবে। এরপর রাত শেষ হয়ে সকাল হয়ে যায়। ততক্ষণে প্রায় ৭ ঘন্টা কেটে গেছে। তখনও পর্যন্ত দিপালী বিশ্বাসকে বাগদা ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২২ নম্বর ফর্ম দেওয়া হয় না।

এদিন সকাল ১০ টা নাগাদ ব্লক প্রশাসনের কাছে ফের এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তখন বাগদার বিডিও সৌমেন্দু গাঙ্গুলী বিজেপি প্রার্থী দিপালী বিশ্বাস এবং অন্যান্য বিজেপি কর্মীদের সামনে ভোটের ফলাফল পড়ে শোনান। সেখানে তিনি বলেন, বিজেপি দিপালী বিশ্বাসের প্রাপ্ত ভোট ২৪১১৩, তৃণমূল প্রার্থী শম্পা অধিকারীর প্রাপ্ত ভোট ২৫৭৯৪। 

বাকি দুই প্রার্থী পিয়ালী বিশ্বাস সিংহ এবং প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসের প্রাপ্ত ভোট যথাক্রমে ৮৯২ এবং ৫৮৩০। ব্লক প্রশাসনের ঘোষিত এই ফলাফল অনুযায়ী দিপালী বিশ্বাসের থেকে শম্পা অধিকারী ১৬৮১ ভোট বেশি পেয়েছেন। অর্থাৎ জেলা পরিষদের ১ নম্বর আসনে জয়ী তৃণমূলের শম্পা অধিকারী। এমন ঘোষণায় অবাক হয়ে যান দিপালী বিশ্বাস। এই ফলাফল তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। 

:‌ এই খবরের ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন :‌

দিপালী বিশ্বাস বিডিওর সামনে অভিযোগ করতে থাকেন, শাসক দলের চাপে ভোটের ফলাফল বিকৃত করা হয়েছে। এটা চরম অন্যায়। এটা কিছুতেই হতে পারে না। অনেক কষ্টের ফলাফলে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। আর সেই ফলাফল কারসাজি করে বদলে দেওয়া হয়েছে। দিপালী বিশ্বাস যখন এই ঘটনার প্রতিবাদ করছিলেন, তখন বিডিওকে সেখানে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

এই ঘটনায় বিজেপি নেতা, কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। খবর জানাজানি হতেই গণনা কেন্দ্রের সামনে হাজির হতে থাকেন দলের কর্মী, সমর্থকেরা। পরে দলের জেলা সভাপতি রামপদ দাসের নেতৃত্বে হেলেঞ্চা এলাকায় বাগদা–বনগাঁ রাজ্য সড়ক অবরোধে নামেন বিজেপি কর্মীরা।

ঘটনার খবর পেয়ে বাগদায় উপস্থিত হন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তিনি অভিযোগ করেন, 'নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। এই ধরনের নির্বাচন করার দরকার নেই। বিডিও এবং পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে।' এদিকে জানা গেছে, দিপালী বিশ্বাসকে জয়ী হিসেবে ঘোষণা না করে পরে এদিন উল্টে বনগাঁ মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৃণমূল প্রার্থী শম্পা অধিকারীকে জেলা পরিষদের ১ নম্বর আসনে জয়ী বলে ঘোষণা করে সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয়।

এব্যাপারে বাগদার বিডিও সৌমেন্দু গাঙ্গুলী জানান, দিপালী বিশ্বাসকে কখনই জয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় নি। ভোটের ফলাফলের সমস্ত নথি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ বনগাঁর মহকুমা শাসকের কাছে রাতেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে জয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনা সম্পর্কে শান্তনু ঠাকুরের অভিযোগ, 'এটা একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র। প্রশাসন এবং তৃণমূল মিলিতভাবে এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। কিভাবে বিজেপির একজন জয়ী প্রার্থীকে সার্টিফিকেট না দিয়ে তাকে পরাজিত দেখিয়ে তৃণমূল প্রার্থীকে জয়ীর সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হল, তার বিচার চাইতে আমরা হাইকোর্টের ‌দ্বারস্থ হচ্ছি।'‌ রাজনৈতিক এবং সাধারণ মানুষের জিজ্ঞাস্য, তাতে কি ভবিষ্যতে আদৌ আসল সত্য প্রকাশ্যে আসবে ?  




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন