Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩

ধর্মঘটের ঘাটতি মেটাতে রবিবারে স্পেশাল ক্লাস, তৃণমূলের রোষের মুখে প্রধান শিক্ষক

The-head-teacher

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌মহার্ঘ ভাতার দাবিতে সরকারি কর্মীদের ডাকা ধর্মঘটকে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে স্কুল বন্ধ রাখার ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্বের রোষের মুখে পরলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। অবিলম্বে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহনের হুমকিও দেওয়া হল। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের কনিয়াড়া যাদবচন্দ্র হাইস্কুলের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের হারে মহার্ঘভাতা দেওয়ার দাবিতে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। সেই আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে গত শুক্রবার কর্মক্ষেত্রে ধর্মঘটের ডাক দেন সরকারি কর্মীরা। সেই আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে কনিয়াড়া যাদবচন্দ্র হাইস্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা ওই দিন স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

ওই দিন স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলের পড়ুয়াদের ওই দিনের পড়াশোনার ঘাটতি মেটাতে স্কুলের শিক্ষকেরা রবিবার স্কুল খোলা রেখে ক্লাস করানোর সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি, এদিন স্কুলের উপস্থিত পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের খরচ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা নিজেদের পকেট থেকে বহন করারও সিদ্ধান্ত নেন।

আর এই ঘটনাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাগদার তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার যখন পুরোদমে স্কুল খোলা রেখে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া চলছে, সেইসময় স্কুলে হাজির হন বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি গোপা রায় সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।

এদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম সরদারকে তাঁর অফিস ঘরের ভেতরে ঘেরাও করে রীতিমতো হুমকি দিতে শোনা যায় গোপা রায় সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্বকে। প্রধান শিক্ষকের টেবিল চাপড়ে তারা দাবি করেন, স্কুল বন্ধ রেখে প্রধান শিক্ষক অন্যান্য করেছেন। এই অন্যায়ের জন্য তাঁকে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহনেরও হুমকি দেওয়া হয়।

এব্যাপারে গোপা রায়ের বক্তব্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, স্কুল পরিচালন কমিটির সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করে রবিবার স্কুল খোলা রেখে স্কুলের পড়ুয়াদের শৈশব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

স্কুলের সহ শিক্ষক দয়াল দলপতি জানান, মহার্ঘ ভাতার দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে স্কুলের সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী বৈঠক করে স্কুল বন্ধ রাখা এবং রবিবার স্কুল খোলা রেখে স্পেশাল ক্লাস করানোর মিলিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিক্ষকদের এই সিদ্ধান্তে অবশ্য খুশি স্কুলের পড়ুয়ারা। তারা জানায়, শুক্রবার ধর্মঘট পালন করায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেদিনের পড়াশোনার যে ঘাটতি হয়েছিল, তা পূরণ করতে রবিবার স্কুল খোলা রেখে স্পেশাল ক্লাস নেওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।

এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম সরদার জানান, রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা শুক্রবার স্কুল বন্ধ রাখার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী স্কুল বন্ধ রাখার পাশাপাশি সেদিনের পড়ার ঘাটতি মেটাতে রবিবার স্পেশাল ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব শিক্ষকেরা সাদরে গ্রহন করেন।

উল্লেখ্য, করোনাকালে এই প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বেই স্কুলের শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়ে তাদের পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তারা যাতে বাড়িতে বসে পড়াশোনার কাজ চালিয়ে যায়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই প্রধান শিক্ষককে এদিন যেভাবে রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে হেনস্থার শিকার হতে হলো, তাতে নিন্দার ঝড় উঠেছে শিক্ষক মহলে।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন