Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৩

একটানা হাজার হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে রেকর্ড পরিযায়ী পাখির

Flying-records-of-migratory-birds

সম্পদ দে : ‌'গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড' হল এমন একটি বই, যাতে কিনা বিশ্বের অবাক করার সমস্ত রেকর্ড তোলা রয়েছে। তবে আমাদের সকলেরই ধারণা এই যে, এই ওয়ার্ল্ড রেকর্ড শুধুমাত্র মানুষের দ্বারাই গড়া সম্ভব। কিন্তু এই ধারণাকেই ভেঙে এখন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়ে যাচ্ছে প্রাণীজগতেরও আশ্চর্যতম সমস্ত ঘটনাগুলি।

ঘটনাটা তবে বিস্তারিতভাবে বলা যাক। আমাদের প্রায় সকলেই পরিযায়ী পাখিদের সম্পর্কে জানেন। আর যারা জানেন না, তাদের জন্য বলে রাখা ভালো, পরিযায়ী পাখি হল সেই সমস্ত পাখি, যারা বিভিন্ন ঋতুতে, বিশেষত শীতকালীন ঋতুতে কয়েকশো কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, এমনকি অনেক সময় অন্য দেশেও পাড়ি দেয় ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য এবং বংশবিস্তার করার জন্য। 

অনেক সময়তেই দেখা যায়, এই পরিযায়ী পাখিরা কয়েকশো কিলোমিটার একটানা পাড়ি দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছায়। আর ঠিক তাদের মধ্যেই 'গডউইট' নামক প্রজাতির এক পাখি বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেলল এইবার। এমনকি শুধুমাত্র এই নয়, আগের একটি পাখির করা বিশ্ব রেকর্ডও ভেঙে ফেলেছে সে।

কি সেই বিশ্ব রেকর্ড, যাকে নিয়ে এত হইচই চারিদিকে? আসলে, বড় লেজযুক্ত গডউইট এমন এক প্রজাতির পাখি, যারা কিনা ঋতু পরিবর্তনের সময় কয়েকশো কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে থাকে তাদের গন্তব্যের দিকে। 

তবে আজকে যেই পাখিটিকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সে মোটেও শ-খানেক কিলোমিটারেই থেমে যায়নি। বরং আলাস্কা থেকে তাসমেনিয়া পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ৫৬০ কিলোমিটার বা ৮ হাজার ৪৩৫ মাইল একটানা উড়ে যাওয়ার পরে, দীর্ঘতম বিরামহীন পরিযায়ীর বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে এক নতুন রেকর্ড গড়েছে সে। 

এর আগের রেকর্ডটিও ছিল এই প্রজাতিরই একটি পাখির। সেই পাখিটিও ২০২০ সালে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার বা ২১৭ মাইল অতিক্রম করার পরে রেকর্ডটি গড়েছিল। তবে এবার প্রশ্নের বিষয় হলো, এই গডউইট পাখিটি কতদিন ও কত কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিল, তা গবেষকরা জানলেন কি করে। 

আসলে পক্ষী বিশারদরা সাহায্য নিয়েছিলেন এক অভিনব পদ্ধতির। এই পাখিটির পিঠের নিচের দিকে তারা আগের থেকেই একটি 5G স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগিয়ে রেখেছিলেন। আর এই ট্যাগের মাধ্যমেই তারা স্যাটেলাইট সিগন্যালের সাহায্য নিয়ে পাখিটির সম্পূর্ণ গতিবিধির উপরে নজর রেখেছিলেন। 

5G স্যাটেলাইট ট্যাগ অনুযায়ী, এই বিশাল পরিমাণ যাত্রাটি ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর শুরু হয়েছিল এবং বিরামহীন একটানা ১১ দিন, ১ ঘন্টা চলার পরে ২৪ অক্টোবর ওই পাখি অস্ট্রেলিয়ার তাসমিনিয়ায় পৌঁছে একবারও অবতরণ ছাড়াই এই যাত্রাটি শেষ করে।

পাখিটি একটানা যে পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করেছে, তাতে রীতিমতো অবাক পক্ষী বিশারদরা। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, এই পাখিটি যে পরিমাণ দূরত্ব পেরিয়েছে, তা মোটামুটি পৃথিবীর পূর্ণ পরিধির প্রায় এক তৃতীয়াংশ অথবা নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনের মধ্যে আড়াইবার ট্রিপ দেওয়ার সমান।

তবে সহজ তো মোটেই নয় বরং 'কঠিন' শব্দটিও কম পড়ে যায় এই গডউইট পাখিটির দুঃসাহসিক যাত্রার কাছে। প্রতিটি পদে পদে তার সামনে ছিল মৃত্যুর হাতছানি। বিশেষজ্ঞরা তো এই দেখেও অত্যন্ত অবাক হচ্ছেন যে, কিভাবে এই পাখিটি জীবন্ত অবস্থায় এত কিলোমিটার পেরিয়ে আসলো।

বার্ড লাইফ তাসমানিয়ার আধিকারিক এরিক ওহেলার বলেন, ১১ দিনের এই দীর্ঘ যাত্রার কারণে পাখিটি তার ওজনের অর্ধেক বা তার থেকেও বেশ খানিকটা বেশি পরিমাণে ঝরিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। কেবলমাত্র ১১ দিন একটানা ওড়ার কারণেই নয়, এই ১১ দিনে একবারও কোনও শিকার না করতে পেরে খাবারের অভাবেও এতটা ওজন কমে গেছে তার।

পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে, 'শর্ট-টেইল্ড শিয়ারওয়াটার'ও 'মাটন বার্ড' প্রজাতির পাখিরা জলে নেমে শিকার করতে পারে। এই সমস্ত পাখিদের পায়ের পাতা হাঁসের মতো জোড়া হওয়ার কারণে এরা জলে সাঁতার কাটতে ও জল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে সহজেই। তবে গডউইট পাখির কাছে এই সুবিধাটা নেই মোটেও। 

পায়ের পাতা জোড়া না থাকার কারণে জল থেকে বেরিয়ে আসার কোনও উপায় নেই এর কাছে। সুতরাং শিকার করার জন্য হোক বা ক্লান্তি অথবা খারাপ আবহাওয়ার কারণে। সমুদ্রপৃষ্ঠে একবার পড়ে গেলে বেঁচে ফেরা সম্ভাবনা আর নেই বলা যেতে পারে। তবে পাখিটির এত বিপদ থাকা সত্ত্বেও তার করা এই দুঃসাহসিক যাত্রা থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়া উচিত আমাদের সকলের। 

মানুষ নাকি এই পৃথিবীর সব থেকে বুদ্ধিমান এবং ক্ষমতাশীল প্রাণী। তবুও কেবলমাত্র এই ছোট্ট একটি পাখি তাকে শিখিয়ে যায় যে, 'সামনে বিপদ যতই বড় হোক না কেন, নিজের উপর ভরসা রেখে এগিয়ে গেলে একদিন ঠিকই সকলে গন্তব্যে পৌঁছাবে।'



‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন