Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২

ভর্তির ৭১ বছর পর স্নাতকের সার্টিফিকেট পেলেন ৯০ বছরের পড়ুয়া

 

90-year-old-student

সম্পদ দে : সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক পাশ হয় ১৮ বছর বয়সে। আর কলেজ পাশ হয় ২১ থেকে ২২ বছর বয়সে গিয়ে। তবে আজকের খবরে যার কথা বলা হবে, তাঁর নাম জয়েস ডিফাউ। তিনিও এবছর স্নাতক হলেন। কিন্তু মোটেও ২১ কিংবা ২২ বছর বয়সে নয়, পুরো ৯০ বছর বয়সে।

অবাক করে দেওয়ার মতো খবরই বটে। আর এই খবরটি আসছে সুদূর আমেরিকা থেকে। আমেরিকার এক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ১৯৫১ সালে জয়েস আমেরিকার উত্তর ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। 

কলেজে তাঁর পড়াশোনার বিষয় ছিল গার্হস্থ্য অর্থনীতি বা হোম ইকনমিক্স। ভালোই চলছিল কলেজ। এর মাঝেই তাঁর জীবনে এসে পড়েন ডন ফ্রিম্যান। প্রায় সাড়ে তিন বছর কলেজে পড়ার পর ১৯৫৫ সালে কলেজের মাঝপথেই ডনকে বিয়ে করেন গার্হস্থ অর্থনীতির ছাত্রী জয়েস।

সংসারের চক্রব্যূহে আটকে কলেজের পড়াশোনা আর শেষ করা হয়নি তাঁর। তিন সন্তানের মা হওয়ার পর তাদের বড় করার দায়িত্বও চলে আসে কাঁধে। তবে এইসবের মাঝেই একটি বড় রকমের ঝড় বয়ে যায় জয়েসের ‌জীবনের উপর দিয়ে। মৃত্যু হয় তাঁর স্বামী ডনের। 

আর এরপর থেকে সংসারের চাপ সম্পূর্ণ চলে আসে জয়েসের কাধে। সন্তানদের এবং নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। মোট ৯টি সন্তানের মা হয়ে আরও দায়িত্ব বাড়ে তাঁর। আর এই বিপুল দায়িত্বের মাঝে তাঁর পড়াশোনার স্বপ্নটি কোথায় যে হারিয়ে যায় তা আর খেয়াল করতে পারেননি জয়েস।

তারপর কেটে গেছে অনেকগুলি বর্ষা ও শীত। জয়েস এখন একজন সুখী ঠাকুমা। নাতি-নাতনিরা স্কুল-কলেজের পড়ুয়া। এই বয়সে সবাই ভেবেছিলেন, জীবনের প্রায় শেষের দিকে পৌঁছে জয়েস বোধহয় নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে এবং ভগবানের কথা চিন্তা করে কাটিয়ে দেবেন। সেখানে সবাইকে চমকে দিয়ে আবারও নিজের অসম্পূর্ণ স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য কলেজে ভর্তি হন জয়েস।

অনুপ্রেরণা হিসেবে পাশে দাঁড়ায় তাঁর পরিবার। আবারও একটি নতুন দৌড়-এ নেমে পড়েন জয়েস। ২০১৯ সালে নতুন করে কলেজে ভর্তি হন। কলেজে ঠাকুমার বয়সী একজন ছাত্রীকে দেখে তরুণ পড়ুয়াদের ভেতরেও পড়াশোনার জন্য নতুন করে এক উদ্যম জেগে ওঠে।

যদিও অত্যাধিক বয়স ও পরে করোনা কালের জন্য কলেজে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারেন নি তিনি। তবে অনলাইন ক্লাস করার জন্য ল্যাপটপের এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার শিখতে হয়েছে তাঁকে। পরিবারকে পাশে পাওয়ায় কোনও কিছুতেই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি।

শেষমেষ ২০২২ এ প্রায় তিন বছর পরে স্নাতক হলেন জয়েস ডিফাউ। তবে কেবল তিন বছর নয়, স্নাতক হতে লেগে গেল তাঁর প্রায় ৭১ বছর! যেই পরিবার সামলানোর জন্য তাঁর পড়াশোনা ছাড়া, সেই পরিবারের সমর্থনেই আবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিলেন, বাস্তবে বয়স একটি সংখ্যা মাত্র। বয়সের কারণে কোনও কাজই অসম্ভব হয়ে পড়ে না, যদি মনে অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকে।

খবরটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই জয়েসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্ববাসী। কিন্তু শুধুমাত্র জয়েসের ছবিই নয়। ভাইরাল হচ্ছে তার এত বছর ধরে সামলে রাখা ৭১ বছর পুরনো কলেজ অ্যাডমিট কার্ডটিও। অবশেষে কলেজে ভর্তি হওয়ার ৭১ বছর পরে স্নাতক হয়ে, ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট অর্জন করে জয়েস হয়ে উঠেছেন সকলের জন্য এক সুপার গ্র্যান্ডমা।








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন