Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২

Tour : স্ট্যাচু অব ইউনিটি

Statue-of-Unity

স্ট্যাচু অব ইউনিটি

অজয় মজুমদার

বহু শতাব্দী ধরে মানুষ ভ্রমণ করে আসছে৷ সত্যিই ভ্রমণ মনকে প্রশস্ত করে৷ আমরা সুখ কিনতে পারবো না৷ তবে ভ্রমণের জন্য রেল বা বিমানের টিকিট কিনতে পারবো। সেটাই কিন্তু সুখ কেনার মতো। ভ্রমণের সময় ক্লান্তি আসে না, কারণ আমরা দেহ-মনে মসগুল হয়ে থাকি। ভ্রমণ মানুষকে জীবনযাপন শেখায়৷ অভিজ্ঞতা তৈরি করতে গেলে ভ্রমণের প্রয়োজন৷ অর্থের থেকে সাহসই ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়৷ 

ভ্রমণ জীবনের একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ভ্রমণ করলে ভয়ের সীমা সংকুচিত করে এবং চিন্তার পরিধি বাড়ায়। অভিজ্ঞতা গল্প তৈরি করে৷ রোমান্সের জন্য ভ্রমন করা প্রয়োজন। স্থাপত্যের জন্য ভ্রমণ করা৷ হারিয়ে যাবার জন্য ভ্রমণ করা। ভ্রমনে গিয়ে যে স্মৃতি তৈরি হয়, সেই স্মৃতিগুলি সারা জীবন আমাদের সঙ্গে থাকে। 

ডাক্তার হারুন সাহারুনের পারিবারিক ট্যুর এবং ট্রাভেল এবার গুজরাট ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। অবশ্য সেই প্রস্তাবটা আমিই দিয়েছিলাম। সেই প্রস্তাবকে মান্যতা দিয়ে তৈরী হল গুজরাট ভ্রমনের পরিকল্পনা। ১০  অক্টোবর ২০২২ আমরা হাওড়া থেকে গরবা এক্সপ্রেস (১২৯৩৮) ধরলাম। ছাড়লো রাত এগারোটায়৷ ১২ অক্টোবর ২০২২, সকাল দশটায় ছায়াপুরি বা ভদোদরা স্টেশনে পৌঁছায়। তিন ঘন্টা ট্রেন লেট ছিল৷ 

ছায়াপুরীতে একটি এসি বাস এসে দাঁড়িয়েছিল আমাদের নেবার জন্য। লাগেজ তুলে আমরা বাসে করে হোটেল নাইস এ পৌছালাম। ঠিকানা- সাহাজিগঞ্জ, ভদোদরা৷ দুদিনের ট্রেন জার্নির পর স্নান খাওয়া সেরে আমরা আবার বাসে উঠলাম স্ট্যাচু অফ ইউনিটি দেখতে৷ ভদোদরা বা বরোদা থেকে দূরত্ব ৯০.২ কিলোমিটার, সময় লাগে দু'ঘণ্টার মতো। বিশ্বের উচ্চতম মূর্তি৷ উদ্বোধনের পর থেকেই রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা বল্লভ ভাই প্যাটেলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে নির্মিত শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য৷ ১৮২ মিটার (৫৯৭ ফুট) লম্বা৷ এই ভাস্কর্য বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য। ষাট তলা ভবনের সমান উঁচু৷ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয়, তিন হাজার এক কোটি টাকা। কাজটি শুরু হয় ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর এবং শেষ হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি৷ নির্মাণ করে লারসেন এন্ড টুব্রো প্রা: লি:। ২০১৮ সালে ৩১ অক্টোবর বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৩ তম জন্মবার্ষিকীতে মূর্তির উদ্বোধন করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এটি ভারতের গুজরাট রাজ্যের সাদু বেট আইল্যান্ডে নর্মদা নদীর পাশে অবস্থিত। ভাস্কর্যটি ২০,০০০ বর্গমিটারেরও বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত৷ ১২ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রবিশিষ্ট একটি কৃত্রিম হ্রদ দ্বারা পরিবেশিত। ভাস্কর্যটি তিন স্তর বিশিষ্ট কাঠামো। ভেতরের স্তরে ১২৭ মিটার দুটি উঁচু টাওয়ার আছে। যা ভাস্কর্যের বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বিতীয় স্তরটি স্টিলের কাঠামো। ভাস্কর্যের তৃতীয় স্তরটি বা উপরের স্তরটি ব্রোঞ্জ দিয়ে মোড়ানো৷ দর্শনের জন্য দুটি লিফট আছে। প্রতি লিফটে ২৬ জন করে যেতে পারবেন৷ উচ্চতার দিক থেকে এর আগে সর্বোচ্চ প্রতিমূর্তির রেকর্ড ছিল চীনের৷ বুদ্ধের বসন্ত মন্দির নামের মুর্তির উচ্চতা ১৫৩ মিটার৷ সেই রেকর্ড ভেঙে 'ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন'‌ নিল। 

স্ট্যাচুর পাদদেশে আছে ভ্রমনকারীদের জন্য হাঁটার পথ, ফুট কোর্ট, বড় বাজার ও অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা৷ স্ট্যাচুর অদূরে থ্রি স্টার হোটেল- ৫২ টি কক্ষ বিশিষ্ট৷ ২৬৪ টি আসনের ক্যাফেটোরিয়া ও একটি গিফট সপ আছে। এছাড়াও, ৮০০ টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা আছে৷

ভদোদরা থেকে ৯০ কিলোমিটার ফোর লেনের রাস্তা নির্মিত হয়েছে৷ পর্যটকেরা আকাশপথে বা রেলপথে ভদোদরা পৌঁছে যেতে পারবেন। আমাদের বাস নামিয়ে দিল ঐক্যের মূর্তি প্রাঙ্গনে৷ ওখানকার নিজস্ব বাসে আমাদের নিয়ে গেল মূর্তির কাছে। হোটেল থেকে টিকিট কিনেছিলাম ৪১০ টাকা করে৷ প্রাঙ্গনে টিকিটের দাম জনপ্রতি ৩৮০ টাকা। 

সন্ধ্যায় আবার সবাই বাসে এসে বসলাম। আমরা ফিরব বরোদায় হোটেল নাইস এ৷ আমাদের রান্না খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল হোটেল স্টারে৷ এটি নাইস হোটেলের কাছেই। আমাদের এখন একটাই পরিবার৷ সবাই সবার আত্মীয়৷ হাসি-ঠাট্টা, গল্প, বাথরুম সং চলছে৷ ছোটরাও একেবারে মিশে গেছে সবার সঙ্গে৷ আমাদের চোখের মনি ছোট্ট আট বছরের সানু৷ বাসের সব সিটই ওর৷ বরোদা হলো ভারতের গুজরাটের ভদোদরা শহরের আরেকটি নাম৷ এটি গুজরাট রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর৷ 

রাজ্যের রাজধানী গান্ধীনগর থেকে ১৪১ কিলোমিটার দূরে বিশ্বামিত্রী নদীর তীরে অবস্থিত। রেললাইন ও ন্যাশনাল হাইওয়ে যা দিল্লী, মুম্বাইয়ের সঙ্গে যুক্ত করে। শহরটির নাম আছে বন্যার প্রাচুর্যের জন্য। শহরটি লক্ষ্মী-বিলাস প্রাসাদের মতো ল্যান্ডমার্কের জন্য, যেটি বরোদা রাজ্যের উপর শাসনকারী মারাঠা রাজকীয় গাইকোয়ার্ড রাজবংশের বাসস্থান হিসেবে ছিল। শহরটি বৃহৎ শিল্পকেন্দ্র যেমন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড, ওএনজিসি, গেইল ছাড়াও ৮০০টি আনুষঙ্গিক সংস্থাগুলির পাওয়ার সেক্টরেব সরঞ্জাম উৎপাদন করে৷ এছাড়াও শহরটি ভারতের প্রধান আই টি হাব হয়ে উঠেছে৷‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন